স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
গত মে মাসে সারা দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ১,২১০ জন। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মে মাসে সড়কে ৫৯৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৬১৪ জনের, আহত হয়েছেন ১,১৯৬ জন। রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহত এবং নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১০ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
মোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত ও ১,২১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৫৬ জন এবং আহত হয়েছেন ২০১ জন। মে মাসের দুর্ঘটনার মধ্যে ৩৯.০২ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যা নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ এবং আহতের ১৬.৮০ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে—১৩৯টি দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ৩০টি দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছেন।
সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে ২৯.৪১ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশা এবং বাকিগুলো নছিমন-করিমন-লেগুনা, কার, জিপ ও মাইক্রোবাস।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪৯.০৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে গাড়ি চাপায়, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার কারণে, এবং ৫.০২ শতাংশ অন্যান্য কারণে। এ ছাড়া ০.৩৩ শতাংশ দুর্ঘটনায় ওড়না চাকায় পেঁচিয়ে এবং ০.৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ঘটেছে।
সড়কের ধরন অনুসারে দেখা যায়, ৩৩.৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৩২.৮৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ২৮.১৪ শতাংশ ফিডার রোডে।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংগঠনটি উল্লেখ করেছে—মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, রোড সাইন বা আলোকসজ্জার অভাব, নতুন চালকদের জন্য বিপজ্জনক টার্নিং পয়েন্ট, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন অমান্য, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ, উল্টো পথে গাড়ি চালানো এবং দীর্ঘ সময় ধরে একজন চালকের গাড়ি চালানো।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি ১০টি সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে—মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ, জাতীয় মহাসড়কে আলোকসজ্জা নিশ্চিত, ধীরগতির ও দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, সড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, রোড সাইন ও রোড মার্কিং স্থাপন, সড়ক পরিবহন আইন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ, আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গঠন, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়ানো এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যান স্ক্যাপ করার উদ্যোগ।
সংগঠনটির দাবি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।