সেফ হাউজে শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ করলেন জয়, ক্ষুব্ধ আওয়ামী ঘরানা

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:


নয়াদিল্লির একটি কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা সেফ হাউজে মা শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। মার্কিন পাসপোর্ট গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো তিনি ভারতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করলেন। যদিও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এই সফরে তার কোনো সাক্ষাৎ হয়নি এবং রাজনৈতিক কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। এরপর এই প্রথমবার মা-ছেলের দেখা হলো। তবে তাদের ঈদ উদযাপন ঘিরে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ।

আওয়ামী লীগের একাধিক স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এই ঘটনাকে পারিবারিক বললেও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একে ‘অসময়োচিত’ ও ‘বিব্রতকর’ হিসেবে দেখছেন। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এমন সময় যখন হাজারো আওয়ামী নেতা-কর্মী কারাগারে, অনেকেই পলাতক, অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন; ঠিক তখন সজীব ওয়াজেদ জয়ের পারিবারিক ঈদ উদযাপন নেতাকর্মীদের অনুভূতিকে আহত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “যখন আমাদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী পরিবারছাড়া ঈদ করছেন, তখন জয় যদি বলতেন ‘আমি ঈদ করব না, কারণ আমার দলের নেতাকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছে না’, তাহলে তা একটা উদাহরণ হতো। এতে আমাদের মনে একটা সাহস ও প্রেরণা আসত।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আগেও ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা করতে পারিনি, এখনো পারছি না। দলীয় রাজনীতির এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার দরকার ছিল। কিন্তু সেটি আজও সম্ভব হয়নি। শীর্ষ নেতারা সবসময় নিরাপদ থাকেন, অথচ চরম মূল্য দিতে হয় সাধারণ নেতাকর্মীদের।”

জানা গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে তার বাংলাদেশের পাসপোর্ট বাতিল হওয়ার পর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং এরপর ইউএস পাসপোর্ট পান। এই পাসপোর্ট পাওয়ার পরেই তিনি ভারত সফরে আসেন।

ভারতীয় নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা যায়, ভিভিআইপি স্ট্যান্ডার্ডে তাকে দিল্লির সেফ হাউজে নেওয়া হয়। যদিও এটিকে প্রকাশ্যে আনা হয়নি এবং সফরের নিরাপত্তা পুরোপুরি গোপন রাখা হয়।

শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকলেও ভাই-বোনের মধ্যে দেখা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, “এটা একান্তই পারিবারিক সফর। জয় দলীয় কোনো আলোচনায় অংশ নেননি। ভারতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেও তার কোনো সাক্ষাৎ হয়নি। এমনকি কলকাতায় যাওয়ারও কোনো পরিকল্পনা নেই বলে আমরা জেনেছি।”

তিনি বলেন, “মা-ছেলের মধ্যে অবশ্যই রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে সেই বিষয়গুলো আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। হয়তো পরবর্তীতে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) মাধ্যমে সে আলোচনা জানা যাবে।”

এই সফরের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কিছু নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *