স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর জানান, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলা ও আর্থিক সমঝোতা একটি সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা মনসুর। তার লক্ষ্য, এই মুহূর্তে কমপক্ষে ১০ কোটি ডলার আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে সংগ্রহ করা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা।
২৩৪ বিলিয়ন ডলারের পাচার: পর্যালোচনার কেন্দ্রে সাবেক সরকার
সরকারি এক অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই অর্থ জাল ঋণ, দুর্নীতিগ্রস্ত অবকাঠামো প্রকল্প ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই প্রশাসন ইতোমধ্যেই ১১টি তদন্ত শুরু করেছে। এসব তদন্তে শেখ হাসিনার পরিবারসহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সমঝোতা ও দেওয়ানি মামলা: নীতিগত অবস্থান জানালেন গভর্নর
আর্থিক সমঝোতা বিষয়ে গভর্নর বলেন, “যদি আইন লঙ্ঘনের প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে হালকা হয়, তবে আমরা দেওয়ানি মামলা করব এবং সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক সমঝোতার কথা বিবেচনা করা হবে।”
তবে এখনো নির্দিষ্টভাবে কারা এই সমঝোতার আওতায় আসতে পারেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পদ পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই মাসেই গভর্নর যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন, যেখানে লন্ডনভিত্তিক আইন সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে।
লিটিগেশন ফান্ডিং: অর্থায়নের নতুন দিগন্ত
আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনায় খরচ নির্বাহের লক্ষ্যে ‘লিটিগেশন ফান্ডিং’ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। এই প্রক্রিয়ায় তৃতীয় পক্ষ মামলা পরিচালনার খরচ বহন করে এবং সফল হলে ক্ষতিপূরণের একটি অংশ গ্রহণ করে।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অমনি ব্রিজওয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্তত ১৬টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
অমনি ব্রিজওয়ের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইগার উইলিঙ্গা বলেন, “আমরা বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে আগ্রহী।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিরোধী দলের অভিযোগ
অন্যদিকে, সাবেক শাসকদল আওয়ামী লীগ এই তদন্ত ও অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করছে। দলটির নেতারা বলছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান প্রশাসন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। এরইমধ্যে দলটির কার্যক্রম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করেছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি: তদন্তের ছায়ায় রাজনীতি
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ইউনূস নেতৃত্বাধীন প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ও সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা দেশের রাজনীতিতে একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।