শেখ হাসিনার বাবুর্চি মোশারফ এখন শত কোটি টাকার মালিক

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

দারিদ্র্য থেকে উঠে এসে শত কোটি টাকার মালিক—এমন গল্প হয়তো সিনেমায় মানায়। তবে বাস্তবেও এমন বিস্ময়কর এক চরিত্রের নাম মো. মোশারফ শেখ। এক সময় যিনি কাজ করতেন রাজধানীর একটি সাধারণ হোটেলে বাবুর্চি হিসেবে, ভাগ্যের মোড় ঘুরে যান যখন তিনি দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসায় বাবুর্চির চাকরি পান।

সালটা ১৯৯৬। মাত্র দুই বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে গণভবনের রান্নাঘরে ঢোকেন মোশারফ। এরপর থেকে তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২৮ বছরের বেশি সময় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাবুর্চি ছিলেন তিনি। আর এই সময়েই গড়ে তুলেছেন ঢাকাসহ ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে বাড়ি, জমি, গাড়িসহ শত কোটি টাকার সম্পদ—এমনটাই দাবি করছেন স্থানীয়রা।

দিনমজুর বাবার ছেলে, আজ কোটিপতি

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের বড় কামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ শেখ। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মোশারফ তার গ্রামের কৃষকদের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে গেছেন বহুবার।

কৃষক মো. চাঁনমিয়া ফকিরের ছেলে সাগর মিয়া লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, কামদিয়া মৌজার ৪৩ শতাংশ জমি জবরদখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন মোশারফ। ঘরের চালের উপর একটি নৌকার প্রতীকও ঝুলিয়েছেন, যেন জনসাধারণ বুঝে নেয় কার শক্তি এখানে কার্যকর।

চাঁনমিয়ার ভাতিজা সেন্টু ফকির বলেন, “জমি ফেরত চাওয়ায় আমাদের মারধর করা হয়েছে। থানা-পুলিশে গিয়েও প্রতিকার পাইনি। মোশারফের প্রভাবের কাছে সবাই যেন অসহায়।”

প্রতিবেশী মো. জামাল শেখ বলেন, “হাসিনার বাবুর্চি হওয়ার পর যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন মোশারফ। গ্রামে ৫ বিঘার বেশি জমি ছাড়াও ফরিদপুর শহরে একাধিক বাড়ি, প্লট এবং গাড়ির মালিক হয়েছেন। ঢাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও আমরা শুনেছি।”

অনুসন্ধান দাবি স্থানীয়দের

স্থানীয়দের দাবি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সুষ্ঠু তদন্ত চালালে মোশারফের অজানা সম্পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোশারফের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বাড়িতেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, “জমি দখলের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

‘বাবুর্চি’ থেকে বিত্তবানের গল্প

শেখ হাসিনার শাসনামলে মোশারফের মতো অনেকেই ভাগ্যবদলের সুযোগ পেয়েছেন। হাসিনা নিজেও এক সময় বলেছিলেন, “আমার বাসার পিয়ন এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক।” মোশারফও কি সেই তালিকায়?—এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *