স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে বহুবিধ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বিশ্বব্যাংক অর্থায়িত ৩,২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ড্রেজার ও জলযান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
দুর্নীতির বিস্তৃতি এতটাই ব্যাপক যে, অভিযোগ রয়েছে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের ‘খালাতো ভাই’ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিআইডব্লিউটিএ-তে দাপট দেখিয়ে এসেছেন। শুধু তাই নয়, সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই প্রকৌশলী টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি ও প্রকল্পের বিল বণ্টনে গড়ে তুলেছিলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
ড্রেজার কেলেঙ্কারিতে কোটি টাকার হাতবদল
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কেনা ড্রেজার ও যন্ত্রাংশ নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ১১টি নিম্নমানের ড্রেজার আমদানির ক্ষেত্রে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে বিল অনুমোদন করেছেন আইয়ুব আলী। ওই ড্রেজারের একাধিকটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকি এক সময় ঠিকাদারদের মারধরের শিকারও হয়েছিলেন তিনি, তবুও তার দাপট কমেনি।
ঘুষ বাণিজ্য ও বৈদেশিক সম্পদ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আইয়ুব আলী সরকারের পতনের দিন অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট, বুড়িগঙ্গার তীরে ৩০০ কোটি টাকার একটি নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেন এবং ওই দিনই ঘুষ হিসেবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় থাকা দুই ছেলের অ্যাকাউন্টে টাকা প্রেরণসহ লন্ডন ও নিউইয়র্কে বাড়ি কেনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমার কোনো বিদেশি সম্পত্তি নেই। আমি একজন সৎ কর্মকর্তা।”
দুদকে একাধিক অভিযোগ, ব্যবস্থা অধরা
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সূত্র জানায়, আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে বহুবার অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন একজন পরিচালক। তিনি বলেন, “সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এপিএস শেখরের প্রভাবেই আইয়ুব আলী রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।”
বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ
বিআইডব্লিউটিএ’র অনেক সৎ কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেছেন, আইয়ুব আলী দীর্ঘ ১৫ বছরে যে হারে প্রকল্প, যন্ত্রাংশ, টেন্ডার ও বিল বিভাজনের মাধ্যমে দুর্নীতি করেছেন, তা “সাগর চুরির” সঙ্গে তুলনীয়। তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা ও আইনানুগ পদক্ষেপ দাবি করছেন তারা।