আবদুল আজিজ, সাতকানিয়া (দক্ষিণ চট্টগ্রাম):
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরখিল গ্রামে একটি তালাবদ্ধ বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ১২ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হলে স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তা ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত হস্তক্ষেপে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক তিন লক্ষ টাকা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে।
ঘরটির মালিক দীপক দাশ, যিনি বর্তমানে সুবীর চক্রবর্তী হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে কারাগারে বন্দি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মার্চ ২০২৫ সালে সুবীর চক্রবর্তী খুন হন, এবং ওই ঘটনায় দীপক দাশসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়। দীপকের ঘরটি সেই সময় থেকে তালাবদ্ধ ছিল এবং ব্যবহারবিহীন অবস্থায় ছিল।
গ্রাম পুলিশ আশুতোষ দাশ জানান, “ঘরটি তালাবদ্ধ ছিল। আগুন লাগার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। তখন শত শত মানুষ বালতি দিয়ে পানি এনে আগুন নিভাতে চেষ্টা করছিল। আমি সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ: আগুন লাগানো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র
পল্লী চিকিৎসক রাহুল কান্তি দাশ অভিযোগ করেন, “দীপক দাশ সুবীর চক্রবর্তী হত্যার আসামি। আমাদের আশঙ্কা—ঘরটি পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে তার পক্ষের লোকজন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করতে চায়। এই ঘটনার পেছনে হত্যা মামলার আসামিদের হাত আছে বলেই আমরা মনে করি।”
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল দাশ ও বাবলু দাশ বলেন, “ঘরটি জনমানবহীন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। রান্নাবান্নাও হতো না। তবুও ঘরে কীভাবে আগুন লাগলো? ঘটনাটি দেখে সন্দেহ হয়, কেউ আগুন লাগিয়ে ঘর পুড়িয়েছে যাতে মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ফাঁসানো যায়।”
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের বক্তব্য
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোঃ ফিরোজ কুতুবী বলেন, “স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। ঘরটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক তিন লক্ষ টাকা। আগুন লাগার কারণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।”
সাতকানিয়া থানার এসআই বেলাল হোসেন জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ১৩ জুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ঘরে আগুন লাগার সত্যতা পাওয়া গেছে, তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে।”
পটভূমি: হত্যা মামলার প্রেক্ষাপট
গত ২১ মার্চ ২০২৫, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সুবীর চক্রবর্তী (৩৭) নামক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই প্রবীর চক্রবর্তী বাদী হয়ে রূপক দাশ, অলক দাশ, দীপ্ত দাশ, সুদ্বীপ্ত দাশ, প্রিয়ন্ত দাশ কালু, দীপক দাশসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলার ৬ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন।