পূবাইল জোনাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত

সাঈদ মৃধা:

গাজীপুর জেলার পূবাইল জোনাল অফিসে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম দালালচক্রের কবলে পড়ে এক ভয়াবহ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। নতুন সংযোগ, মিটার প্রতিস্থাপন, বিল সংশোধন কিংবা সাধারণ যেকোনো সেবার জন্য সাধারণ মানুষকে অফিসে নয়, বরং দালালদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অফিসের নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে দালালদের রয়েছে দৃশ্যমান সখ্যতা। এই দালালচক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, বিলম্বিত সেবা এবং হয়রানি এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

নতুন সংযোগ নিতে এসে প্রতারণার শিকার হন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের জাগিরারটেক গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, পূবাইল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলে মানিক ও প্রান্ত নামে দুই দালাল তাঁর কাছে আসে এবং বিভিন্ন অজুহাতে নতুন সংযোগ স্থাপনের জন্য ৬ হাজার টাকা আদায় করে। শুধু তাই নয়, খুঁটি থেকে লাইন সংযোগ দেওয়ার নাম করে বাদল নামের একজন আরও ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

অভিযোগ রয়েছে, গ্রাহকরা যদি এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন, তাহলে তাঁদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। কেউ কেউ ভয়, হুমকি বা প্রতিশোধের আশঙ্কায় মুখ খুলতে সাহস পান না।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটে যখন এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম নুরুন্নবী সাংবাদিককে হুমকি দেন। টেলিফোনে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “আমার সময় নেই। আপনি যদি নিউজ করেন তাহলে আপনি কত বড় সাংবাদিক তা আমি দেখে নেবো। আপনি নিউজ করলে আপনার সমস্যা হবে, আমি আপনার নামে মামলা করব।”

একজন সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এমন মন্তব্যে স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এমন প্রকাশ্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল। তারা বলেন, অবিলম্বে পূবাইল জোনাল অফিসে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দালাল চক্র, দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এছাড়া, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যেন সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয়—সেটি নিশ্চিত করতে কার্যকর নজরদারি গঠন করা হোক।

জনগণ এখন প্রশ্ন রাখছে—সরকারি প্রতিষ্ঠান কি তবে দালাল আর দুর্নীতিবাজদের হাতে বন্দী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *