“ঢাকা-থ” সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ, দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা

সাগর চৌধুরী, ভোলা:

ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচলরত “ঢাকা-থ” সিরিজের সিএনজি অটোরিক্সার বৈধতা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের প্রতি দাবি জানিয়ে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন এই খাতের মালিক ও শ্রমিকরা।

তারা জানান, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ৩৩ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য এলাকায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া সম্ভব। এই আইনের ভিত্তিতেই “ঢাকা-থ” সিরিজের প্রায় ৩ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা ঢাকা মহানগর এলাকায় চলাচলের অনুমতি দাবি করছে মালিক-শ্রমিকরা।

বিশ্লেষণে জানা যায়, ২০০০ সালের পূর্বে ঢাকা শহরে প্রায় ৩৫ হাজার ‘বেবি ট্যাক্সি’ চলাচল করত। পরবর্তীতে এগুলো উচ্ছেদ করে মাত্র ১৫ হাজার ‘ঢাকা মেট্রো-থ’ সিরিজের সিএনজি অটোরিক্সার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ২০ হাজারেরও বেশি চালক কর্মহীন হয়ে পড়েন। এরইমধ্যে বিগত ২৫ বছরে বিপুল সংখ্যক চালক বিআরটিএ থেকে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করলেও নতুন কোনো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়নি, ফলে নতুন চালকদের কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দেয়।

অন্যদিকে, মেট্রো সিরিজের গাড়ির মালিকরা সিন্ডিকেট গঠন করে অতিরিক্ত জমা আদায় ও চালকদের উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগের ফলে বহু চালক নিজ উদ্যোগে পরিবার চালাতে “ঢাকা-থ” সিরিজের গাড়ি কিনে মহানগরের আশপাশে চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন।

২০১৬ সালে সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ঢাকা মহানগরের আওতায় ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত করায়, পূর্বের বৈধ চলাচলকারী চালকরা সেখান থেকেও উচ্ছেদ হয়ে ফের কর্মহীন হয়ে পড়েন।

বর্তমানে এসব চালকের গাড়ি চলাচল প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পরিবারে খাদ্যসংকট, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়াসহ নানা সমস্যায় তারা জর্জরিত।

চালকরা জানান, তারা ইতোমধ্যে সচিব, উপদেষ্টা ও বিআরটিএর চেয়ারম্যান বরাবর বিভিন্ন সময়ে স্মারকলিপি ও দরখাস্ত পেশ করেছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নতুন সিএনজি অটোরিক্সার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে পত্র পাঠালেও সেখানে “ঢাকা-থ” মালিক-শ্রমিকদের দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি দুটি সংগঠন একত্রিত হয়ে “ঢাকা-থ সিএনজি অটোরিক্সা মালিক-শ্রমিক ঐক্যজোট” নামে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। ১৮ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদে অনুষ্ঠিত কর্মী সভায় তারা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

ঘোষিত কর্মসূচি:

তাদের দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে
👉 ২১ জুন থেকে ২৮ জুন ২০২৫ পর্যন্ত আলোচনার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
👉 এর মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে
👉 ২৯ জুন ২০২৫ থেকে বিআরটিএ সদর দফতরের সামনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

দাবি ও অনুরোধ:
১. “ঢাকা-থ” সিরিজের ৩ হাজার সিএনজি অটোরিক্সার মহানগরে চলাচলের বৈধতা প্রদান
২. পরিবার-নির্ভর প্রায় ৩০০০-এর অধিক চালককে কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনা
৩. দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রতি সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ

সাংগঠনের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের এই ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে যদি আরও কালক্ষেপণ করা হয় বা কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে এর দায়ভার বিআরটিএ চেয়ারম্যান, সিনিয়র সচিব, উপদেষ্টা এবং ডিএমপি কমিশনারকে নিতে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *