চট্টগ্রাম মহানগরে পরোয়ানা নিয়ে ঘুরছে ২৪ হাজার আসামি, বছরের পর বছর তামিল নেই

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:


চট্টগ্রাম মহানগরে পরোয়ানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার আসামি। বছরের পর বছর ধরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও অনেককেই এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

চট্টগ্রামের কুখ্যাত ছিনতাইকারী মো. আলম ওরফে চাকমা আলমের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ২০১৮ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পেশাদার এই অপরাধী এখনও পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। একইভাবে ১৫ ছিনতাই মামলার আসামি মান্নান গ্রুপের প্রধান আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে পরোয়ানা জারি হলেও, তিনিও গত ছয় বছর পলাতক।

এছাড়া চাঞ্চল্যকর এক মামলায়, পতেঙ্গায় বিচারকের ওপর হামলার ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত কিশোর গ্যাং লিডার আলী আকবর ইকবালের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় হয়। তার বিরুদ্ধেও সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়, কিন্তু এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের আওতাধীন ২১টি আদালত থেকে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭৭৬টি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬৯৫ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং বিচারাধীন ও তদন্তাধীন মামলার আসামি রয়েছেন ১৬ হাজার ৮১ জন।

মহানগরের ১৬ থানার মধ্যে চারটি থানায় অপরাধের মাত্রা তুলনামূলক বেশি। কেবল এই চার থানায় জমা রয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পরোয়ানা।

থানা-ভিত্তিক ওয়ারেন্টের সংখ্যা:

  • কোতোয়ালি থানা: ৩,৮৩৪টি

  • চকবাজার থানা: ৭৮৫টি

  • বাকলিয়া থানা: ১,৪২৩টি

  • খুলশী থানা: ১,৬৭৩টি

  • বায়েজিদ থানা: ২,১২৮টি

  • পাঁচলাইশ থানা: ২,৪৯১টি

  • চান্দগাঁও থানা: ১,৮৮৩টি

  • পাহাড়তলী থানা: ৯৬১টি

  • আকবর শাহ থানা: ৬৭৩টি

  • হালিশহর থানা: ১,৫৫১টি

  • ডবলমুরিং থানা: ২,৯৩৬টি

  • বন্দর থানা: ৯৯০টি

  • ইপিজেড থানা: ৫৮৪টি

  • পতেঙ্গা থানা: ৪৩১টি

  • কর্ণফুলী থানা: ৯৪৪টি

  • সদরঘাট থানা: ৪৮৯টি

মহানগর আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫৫ হাজার ৯৬টি।

কারণ ও বিশ্লেষণ:
কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, “প্রতি মাসে যত পরোয়ানা আসে, তার ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। তবে পুরনো অনেক পরোয়ানা জমে আছে এবং অনেক আসামির ঠিকানা সঠিক না থাকায় তামিল করা সম্ভব হয় না। তবুও মাসে ১০০–২০০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”

কর্ণফুলী থানার ওসি মো. শরীফ বলেন, “অনেক আসামির ঠিকানা ভাসমান হওয়ায় তাদের খুঁজে বের করা কঠিন। তবে আগের তুলনায় ওয়ারেন্ট তামিলে গতি এসেছে, ফলে অপরাধ কমছে।”

সাবেক বিভাগীয় স্পেশাল পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মনে করেন, “থানার পুলিশদের নানা কাজের চাপে তারা পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের ধরার সময় পায় না। এজন্য প্রতিটি থানায় আলাদা একটি ওয়ারেন্ট সেল থাকা প্রয়োজন।”

অন্যদিকে সিনিয়র আইনজীবী চৌধুরী আবদুল্লাহ বলেন, “পেশাদার অপরাধীরা ধরা না পড়ায় সাধারণ মানুষ বারবার তাদের দ্বারা ভুক্তভোগী হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়াও দীর্ঘ হচ্ছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *