স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস (২৬ জুন) উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ”রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার মানুষদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ করাও অত্যাবশ্যক।”
বুধবার (২৫ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও সংহতি প্রকাশ করেন এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের দিন:
মির্জা ফখরুল বলেন, “২৬ জুন আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি নির্যাতনের শিকার মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ এবং বিশ্বজুড়ে এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব আজ প্রযুক্তিতে যতদূর এগিয়েছে, মানবিক মূল্যবোধে ততটা অগ্রগতি হয়নি। এখনো স্বৈরশাসকরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং নাগরিক অধিকারগুলো দমন করতে হিংস্র নির্যাতনের পথ বেছে নিচ্ছে।”
আওয়ামী শাসনে ১৬ বছর ধরে চলছে দমন-পীড়নের রাজত্ব:
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দমননীতির অভিযোগ করে বলেন, “বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছর ধরে চলে আসছে এক ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন। এই সময়ে বিরোধী মত দমন, গণতন্ত্র হত্যা, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নিরাপরাধ মানুষদের ওপর দমন-পীড়ন ছিল নিয়মিত ঘটনা।”
তিনি আরও বলেন, “গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সরকারের বীভৎস দমন নীতিতে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে। হাজার হাজার মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছে। এই ঘটনার চিত্র দেখে শুধু দেশবাসীই নয়, গোটা বিশ্ব হতবাক হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার বন্দিত্ব ছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার প্রতীক:
মির্জা ফখরুল তার বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বন্দিত্বকে “রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার এক জঘন্য উদাহরণ” বলে আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসনকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। অসুস্থ অবস্থায় তার চিকিৎসায়ও সরকারের অবহেলা ছিল অমানবিক। এটি ছিল গণতন্ত্র, মানবতা এবং আইন-শাসনের চরম লঙ্ঘন।”
গণমাধ্যম, মতপ্রকাশ ও জনগণ— সবাই ছিল বন্দিত্বের শৃঙ্খলে:
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, “একদলীয় শাসনের অন্ধকারে তখন দেশের গণমাধ্যম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন—সবই ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। জনগণের কণ্ঠ রোধ করতে হুমকি, ভয় ও নির্যাতন চালানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক শক্তির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হুলিয়া জারি করে, আটক, রিমান্ড ও হয়রানি চালানো হয়েছে। দেশজুড়ে নৈরাজ্য আর দমন-পীড়নের এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল।”
রাষ্ট্রীয় দমননীতি বন্ধ ও পুনর্বাসন নিশ্চিতের দাবি:
মির্জা ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবার যেন সঠিক প্রতিকার পায় এবং ন্যায্য ও পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পায়— সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ না করলে মানবাধিকার সুরক্ষা কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকবে।”
গণতন্ত্রকামীদের ঐক্য জরুরি:
বিবৃতির শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকের দিনে আমি সব গণতন্ত্রকামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্যাতন ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। মানবাধিকারের লঙ্ঘন রোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে।”