স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ এনেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ”আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাধারণ নাগরিক অধিকারগুলো কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে।”
বুধবার (২৫ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বার্তায় তার এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
‘বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের রূপ ছিল ভয়াবহ’
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা আওয়ামী শাসনকাল ছিল এক ভয়াবহ দুঃশাসনের সময়, যেখানে বিরোধী মতের মানুষদের গুম, খুন, হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এই শাসনের প্রধান শিকার ছিলেন গণতন্ত্রের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যাকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করা হয় এবং তার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সরকার অমানবিক নিষ্ঠুরতা দেখায়।
তিনি বলেন, “গোটা দেশ ছিল বাকরুদ্ধ। ফ্যাসিবাদী সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু আচরণের প্রতিবাদ করলেই পেটোয়া বাহিনী দিয়ে দমন করা হতো। মানবতা, নারী, শিশু—কারোই নিরাপত্তা ছিল না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ তাদের পোষ্য সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।”
‘বিশ্বজুড়ে নির্যাতন চলছে’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও সহিংসতা ও সংঘাত বন্ধ হয়নি। স্বৈরাচারী শাসকরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে লক্ষ মানুষ নিহত ও পঙ্গু হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আজকের এই দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এদিন বিশ্বব্যাপী নির্যাতিতদের প্রতি সম্মান জানানো এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের আহ্বান জানানোর দিন। সারা দুনিয়ায় এখনো বহু মানুষ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে গণতন্ত্রকামীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
‘মব জাস্টিস ও একমাত্রিক শাসনের আশঙ্কা’
তারেক রহমান আরও বলেন, ”আজকের বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়নি। এখন ‘মব জাস্টিস’-এর নামে হিংস্র উন্মাদনা সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মানবিক মূল্যবোধ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। একমাত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “মানবতা, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ দরকার।”
নির্যাতিতদের প্রতি সহমর্মিতা
বিবৃতির শেষ অংশে তারেক রহমান বলেন, “আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দূর করতে হবে। মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকামীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই নির্যাতনকারী গোষ্ঠী ও স্বৈরশাসকদের পরাজিত করা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে বিশ্বব্যাপী নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানানো হয় এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা হয়।