ছাতকে দফায় দফায় পুশইন, মানবিক সহায়তায় এগিয়ে ছাতকের ইউএনও তরিকুল ইসলাম

মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার :

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে বারবার পুশইনের ঘটনা ঘটাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর ফলে মানবিক সংকটে পড়া সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি আটক হওয়া নাগরিকদের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোররাতে নোয়াকোট সীমান্ত দিয়ে ২০ জন বাংলাদেশিকে পুশইন করে বিএসএফ। তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে তিনটি পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশু সদস্যরা। দুপুরে তাদের ছাতক থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি মো. মোখলেছুর রহমান আকন্দ।

আটককৃতরা হলেন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী থানার দক্ষিণ আজুয়াটারি ও বড় ভিটা গ্রামের মোট ১৯ জন সদস্য এবং পাবনা জেলার একজন নারী। এদের মধ্যে রয়েছেন বৃদ্ধ, শিশু, কিশোর ও নারীসহ নানা বয়সী মানুষ।

আটকের পর ইউএনও মো. তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য উত্তর খুরমা ইউনিয়নের জাহান আরা চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। সেখানে তাদের নিরাপদ আশ্রয়, খাবার, প্রয়োজনীয় পোশাক ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা হয়। ইউএনও নিজে সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে প্রত্যেকের খোঁজখবর নেন ও প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করেন।

উল্লেখ্য, এর আগেও একই সীমান্ত দিয়ে একাধিকবার বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশইন করে বিএসএফ।

১২ জুন: নোয়াকোট বিওপি সীমান্ত দিয়ে ১৭ জনকে পুশইন করা হয়। তাদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৪ জন নারী ও ৮ জন শিশু ছিল।

২৮ মে: ছনবাড়ী সীমান্ত দিয়ে পুশইন হয় আরও ১৬ জন। এদের সবাই কুড়িগ্রামের ৫টি পরিবারের সদস্য।

এই দুই ঘটনায়ও ইউএনও তরিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিক আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও পোশাক সরবরাহ করেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে মানবিক সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
পরবর্তীতে, কুড়িগ্রাম পুলিশের সহায়তায় পরিচয় নিশ্চিত করে ৩১ মে ওই ১৬ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন প্রত্যেক পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ২৫ হাজার টাকা প্রণোদনা প্রদান করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন,
আমরা পুশইন হয়ে আসা নাগরিকদের প্রতি সর্বোচ্চ মানবিক সহানুভূতি প্রদর্শন করছি। তাদের নিরাপদ আশ্রয়, খাবার, পোশাক ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা যেন দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেন, সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ইউএনও’র এমন মানবিক ও দায়বদ্ধতাপূর্ণ ভূমিকা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে প্রশংসিত হচ্ছে। সীমান্তে পুশইনের মতো অমানবিক ঘটনার মাঝে তার নেতৃত্বে ছাতক উপজেলা প্রশাসন সত্যিকারের মানবতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *