স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
প্লাস্টিক দূষণকে আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে ভয়ংকর সংকট হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “প্লাস্টিক এখন হুংকার দিচ্ছে— হয় আমরা থাকব, না হয় ওরা থাকবে। দুটো একসঙ্গে থাকা যাবে না।” তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে এবং এর দায় আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতির ওপর।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও পরিবেশ মেলা এবং বৃক্ষমেলা-২০২৫ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, “প্লাস্টিক এমন এক জিনিস যার জন্ম আছে, মৃত্যু নেই। পৃথিবীর সব কিছুর মৃত্যু আছে— কিন্তু প্লাস্টিকের নেই। এটি বেড়েই চলছে, ছড়িয়ে পড়ছে নদী-নালা, খাল-বিল ও সমুদ্রজুড়ে। ফলাফল, জীববৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।”
প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় জীববৈচিত্র্য বিপন্ন:
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দেশে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক না থাকায় নদী, খাল ও জলাশয় পলিথিন ও প্লাস্টিকে ঢেকে গেছে। কোনো কোনো নদীর তলদেশে ৭-৮ ফুট পর্যন্ত প্লাস্টিকের আস্তরণ পড়ে গেছে। প্লাস্টিক বোতলকে এর প্রতীক হিসেবে ধরে এখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দিবস উদযাপন করি, কিন্তু বাসায় গিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহারে আগের মতোই অনড় থাকি। এভাবে চললে মানবজাতির পরাজয় শুধু সময়ের ব্যাপার। এখনই আমাদের লাইফস্টাইল বদলাতে হবে। নয়তো পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
তরুণদের ভূমিকায় আশাবাদী ইউনূস:
প্রধান উপদেষ্টা তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, “জুলাই মাসে আমরা দেখেছি তরুণরা কী অসীম শক্তি ধারণ করে। তারাই আজকের বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের সবচেয়ে সৃজনশীল। তাই তাদের পরিবেশ রক্ষায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধের আহ্বান:
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “প্লাস্টিক শুধু মানুষের জন্য নয়, এটি পৃথিবীর সব প্রাণীর জন্য বিষ। মানুষ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে জনপ্রতি প্লাস্টিক বিষের মাত্রা। এটা ধীরে ধীরে ঘটছে বলে আমরা বুঝি না— কিন্তু এটি ভয়ানক এক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করলে দুনিয়া অচল হয়ে যাবে এমন নয়। আমরা আত্মবিধ্বংসী চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে বিকল্প ভাবতে শিখতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক লাভ কোনো সভ্য সমাজের চিন্তা হতে পারে না।”
প্রধান উপদেষ্টার আশাবাদ ও উদ্বোধন:
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে ড. ইউনূস জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও পরিবেশ মেলা-২০২৫ এবং বৃক্ষমেলা-২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তিনি পরিবেশ সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাপকদের মধ্যে জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার, জাতীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ পুরস্কার এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ পুরস্কার প্রদান করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয় যে, পরিবেশ সুরক্ষা আর বিলাসিতা নয়— এটা এখন টিকে থাকার লড়াই। তিনি বলেন, “জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।”