স্টাফ রিপোর্টার:
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় কে এই চাঁদাবাজ স্ব-ঘোষিত আঃ কাইয়ুম আওয়ামী লীগ ওরফে মাইজভান্ডারি? এর খুঁটির জোর কোথায়—এই প্রশ্ন এখন উপজেলার সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে।
এলাকা ঘুরে জানা যায়, আঃ কাইয়ুম আ.লীগ ওরফে মাইজভান্ডারি উপজেলার আড়দী পাড়া গ্রামের মাজার পূজারী খালেক ভান্ডারীর মেয়ে জামাই। আজ থেকে কয়েক বছর আগে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকা হতে বিভিন্ন অপকর্মের দরুন বিতাড়িত হয়ে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে এক বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে আশ্রয় নেয় এই প্রতারক। সেই সূত্রে প্রাইভেট পড়ানোর ছলে খালেক ভান্ডারীর মেয়ে মৌসুমীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পরে এবং পরবর্তীতে বিবাহ করতে বাধ্য হয়। জানা যায়, এর আগেও মৌসুমী আরেক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল।
সাংসারিক চাপে আত্মীয়স্বজনকে ব্যবহার করে তৎকালীন সময়ে শ্রীনগর থানার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে থানা রাইটার পদে চাকরিও নেয়। কিন্তু ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি’—প্রবাদটির মতোই থানার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও তথ্য পাচারের দায়ে তাকে থানা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে বেকার হয়ে পড়ে চতুর কাইয়ুম শ্রীনগরের ষোলঘর এলাকায় এ কে এস কে উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্বপন রায় নামক এক ব্যক্তির জমি ভাড়া নিয়ে ‘আঃ কাইয়ুম নার্সারি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে। পরে ঐ জমির জাল দলিল তৈরি করে নিজের নামে নিতে চাইলে এলাকাবাসীর হাতে মার খেয়ে সেখান থেকে বিতাড়িত হয়।
এভাবে প্রতারণা করে কোনোভাবে টিকে না থাকতে পেরে, হিংস্র হয়ে ওঠে আঃ কাইয়ুম আ.লীগ ওরফে মাইজভান্ডারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, এই ভণ্ড আঃ কাইয়ুম নামমাত্র একটি মানবাধিকার সংস্থার মুন্সিগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি হয়ে উপজেলার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ কেলেঙ্কারিতে লিপ্ত ছিল। বিশেষ করে বিধবা নারীদের সদস্য করে অফিসে এনে নানা অপকর্ম চালাতো। বিষয়টি জানাজানি হলে সংস্থার অন্যান্য সদস্যরা তাকে বহিষ্কার করে।
এরপর সাংবাদিকতার নামে নতুন ফাঁদ পাতেন। কখনো মুক্ত খবর, কখনো দেশকাল, আবার কখনো ঢাকা প্রতিদিন, ইনকিলাব কিংবা রাজধানী টিভির প্রতিনিধি পরিচয়ে বিভিন্ন ড্রেজার মালিক, কলকারখানার মালিকদের প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক। এক সময় শ্রীনগর প্রেসক্লাবের সদস্য হলেও চাঁদাবাজির দায়ে সেখান থেকেও বহিষ্কৃত হয়।
প্রকৃতপক্ষে বিতর্কিত এবং অযোগ্য হওয়ায় কোনো প্রকৃত সাংবাদিক তার সঙ্গে কাজ করতে চায় না। ফলে দেউলভোগ এলাকায় কিছু অসাধু লোক নিয়ে অফিস খুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যক্তি। তাকে আওয়ামী লীগের উপজেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান মামুনের ‘বিশ্বস্ত অনুচর’ হিসেবে দেখা যায়।
নারী কেলেঙ্কারির দায়ে একাধিকবার অভিযুক্ত হলেও, প্রতিবারই মসিউর রহমান মামুনের সহযোগিতায় শাস্তি এড়িয়ে গেছে কাইয়ুম। এ কারণে তার পরকীয়ার মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি মথুরাপাড়া গ্রামের স্বপন মেম্বারের স্ত্রীর সঙ্গে কাইয়ুমের পরকীয়ার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যা তার অতীত ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্বপন মেম্বারের স্ত্রী সেলিমা আক্তারের সঙ্গে কাইয়ুমের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে কাইয়ুম উল্টো পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং হত্যার হুমকি দেয়। ফলে স্বপন মেম্বার আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।