স্টাফ রিপোর্টার:
উত্তরা বিআরটিএ (দিয়াবাড়ি খালপাড়, তুরাগ) ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখায় ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অফিসের সহকারী পরিচালক (এডি) লিটন বিশ্বাসের নেতৃত্বে দালাল চক্রসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একযোগে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে ঘুষ না দিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্যান্য সরকারি সেবা পেতে তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। পাশ বা ফেইল দেখানোর ক্ষেত্রে দালালরা সরাসরি ভূমিকা পালন করে না; এতে সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা অপরিহার্য। দালালদের হাতে টাকা দিলে খুবই কম সময় বা সহজ পদ্ধতিতে পাশ পাওয়া যায়। অন্যথায় ফেইল দেখানো হয়।
এক ভুক্তভোগী জানান, দুইবার ভালো পরিক্ষা দিলেও ঘুষ না দেয়ায় তাকে ফেইল দেখানো হয়। পরে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ দিলে নামমাত্র পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন।
বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক লিটন বিশ্বাস বলেন, “আমি পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকি না, আমার ইন্সপেক্টররা পরীক্ষা নেন। আমি শুধু তদারকি করি।” তিনি আরও জানান, মানুষের অভিযোগ থাকবে, তবে কাজ করতেই হয়।
অপরদিকে দালালদের দৌরাত্ম্য অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোটরযান পরিদর্শক (কাউসার আলমের) সীমাহীন ঘুষ বানিজ্যে দিশেহারা হয়ে উঠেছে মোটরযান মালিকরা।
উত্তরা বিআরটিএ অফিসে শুধু দালালরা নয়, মোটরযান পরিদর্শক কাউসার আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঘুষের বাজার চালিয়ে যাচ্ছেন। মোটরযান মালিকরা হতাশ, তারা নানা প্রকার ঘুষ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী ও শোরুম মালিকদের অভিযোগ, মোটরযান এনডোর্সমেন্ট, রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, শ্রেণী পরিবর্তন, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিটসহ সকল ধরনের সেবা নিতে হয় বড় অংকের ঘুষ। অফিসের সামনে ছদ্মবেশী দালালরা ঘোরাফেরা করে এবং ভিতরে কর্মকর্তারা সহায়তা করে।
তবে দুর্নীতির পাশাপাশি, এই অফিসে সাধারণ মানুষের প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারও নিত্যদিনের ঘটনা।
প্রতিদিন কয়েক শত মানুষ জেলা শহর থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিতে আসেন। অনেক সময় বিআরটিএ কর্মকর্তারা অফিসে না থাকার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তারা তাদের কাগজ অফিসে জমা দিতে পারেন না। আবার অনেক সময় কাগজ জমা নিলেও বিআরটিএ অফিসে বড় অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়।
তারা ঢাকার মাইকম্পিউটারে টাকা জমা দেওয়ার জন্য ভিড় করেন, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন মাত্র ২৫-৩০ জনই টাকা জমা দিতে পারেন। বাকিরা টাকা জমা দিতে না পেরে ফিরে যান। অনেকে দুই সপ্তাহ ঘুরেও টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ভুক্তভোগি মোটরযান মালিক মো: আব্দুল মালেক জানান, তার নামের একটি অক্ষর ভুলের কারণ দেখিয়ে উওরা বিআরটিএ অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করা হয়।
উওরা বিআরটিএ অফিসের উপ-পরিচালক কাজী মোহাম্মদ মোরসালীন সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রাহকদের কিছু অভিযোগ থাকতে পারে, তবে আমি আসার পর সেবার মান কিছুটা বেড়েছে।”
বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের দ্রুত দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছে ভুক্তভোগী মানুষ ও মোটরযান মালিকরা।