স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “যেকোনো দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো কর্মক্ষম যুবশক্তি। এ যুবশক্তিকে মাদকমুক্ত রেখে আধুনিক প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও মূল্যবোধে গড়ে তুলতে পারলেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে।”
বুধবার (২৬ জুন) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে “মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫” উপলক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে যখনই বৈষম্য, বঞ্চনা ও মূল্যবোধের সংকট তৈরি হয়েছে, তখনই তারুণ্য তা প্রতিহত করেছে। জুলাই ছাত্র-যুব-জনতার গণঅভ্যুত্থান তারুণ্যেরই বিজয়। সেই যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে তাদের মুক্ত রাখতে হবে।”
নারী-শিশু-কিশোর ব্যবহারে উদ্বেগ
উপদেষ্টা বলেন, “মাদক পাচারে নারী, শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার একটি ভয়াবহ প্রবণতা। এর ফলে তারা অপরাধে জড়াচ্ছে এবং অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।” তিনি জানান, এ সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র, মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে কাজ করছে।
নতুন ধরনের মাদক, নতুন কৌশল
তিনি জানান, বর্তমানে New Psychoactive Substances (NPS) নামক নতুন ধরনের সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক মাদক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, যা মাদক সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এসব মাদক আইনত নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন কৌশল এবং নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
অস্ত্র নীতিমালা ও নিরাময় প্রকল্প
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “সরকারের সদিচ্ছায় ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অস্ত্র ব্যবহার নীতিমালা ২০২৪’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রথম ব্যাচের কর্মকর্তারা অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।” তিনি জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি বিভাগীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। ভবিষ্যতে মাদকাসক্তদের জন্য পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়
“মাদকের বিরুদ্ধে শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়,” বলেন উপদেষ্টা। “এটি মোকাবিলায় সমাজের সব শ্রেণিকে সম্পৃক্ত করে একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, “মাদকের কুফল সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো বোঝে সেই পরিবার, যেখানে কেউ মাদকাসক্ত।” তিনি সামাজিক প্রতিরোধ জোরদারের আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, “বাংলাদেশে মাদক উৎপাদিত না হলেও, পাশ্ববর্তী দেশ থেকে আসা মাদকই আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে। সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।”
পুরস্কার ও আয়োজন
অনুষ্ঠানে মাদকবিরোধী রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও সেরা বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র এবং মাদকবিরোধী গবেষণা ও প্রচারে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দুটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘Annual Drug Report’ এবং দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিরের মোড়ক উন্মোচন করেন।
এর আগে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি এবং বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রের অংশগ্রহণে নির্মিত স্টল পরিদর্শন করেন।