স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
“পিস্তল কেন, মিসাইল সঙ্গে রাখলেও আমি-আপনি কেউই নিরাপদ নই”— সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়াবহ ফাঁকফোকর, তথ্য সন্ত্রাস এবং নিরাপত্তা সংস্থার ভূমিকাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন—বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে সরকারে থেকেও কেউ নিরাপদ বোধ করেন না।
ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লিখেছেন,
“গতকালকের ঘটনায় এটা বুঝতে পারলাম যে, পিস্তল কেন, মিসাইল সাথে রাখলেও আমি, আপনি কেউই নিরাপদ নই।”
তিনি আরও বলেন,
“যেভাবে মুহূর্তের মধ্যেই দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত কারও হাতে পৌঁছে গেলো, তা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। এরা চাইলে যে কোনো দেশি বা বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, গুপ্তহত্যাকারী কিংবা বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আমাদের রিয়েল-টাইম লোকেশন, শিডিউল, সেনসিটিভ ইনফরমেশন—অর্থ বা স্বার্থের বিনিময়ে পাচার করে দিতে পারে।”
“আমি সরকারে আছি। আমার সাথেই যদি এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের জন্য পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। এই তথাকথিত ‘তথ্য সন্ত্রাসীদের’ শাস্তিই বা কী?”—যোগ করেন আসিফ মাহমুদ।
তিনি দেশের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উদ্দেশ্যে অভিযোগের সুরে বলেন,
“যাদের দায়িত্ব শত্রুর ওপর নজরদারি করে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তারা এখন জনগণের অর্থ ও শক্তি ব্যয় করছে দেশের নাগরিকদের ওপর নজরদারিতে, চরিত্র হননে। কোনো লেজিট তথ্য না পেয়ে উদ্ভট, হাস্যকর ও মনগড়া অভিযোগ এনেই চরিত্র হননের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।”
সরকারের ভেতরকার চাপা অসন্তোষ এবং নাগরিক অধিকারের সংকট তুলে ধরে আসিফ বলেন,
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গণ-অভ্যুত্থানের কিছু তথাকথিত নেতৃত্ব এবং হাসিনপুত্রের বক্তব্যের মধ্যে এখন আর কোনো পার্থক্য থাকছে না। অথচ যারা গণতন্ত্রের জন্য মাঠে ছিল, তারাই আজ সরকারের টার্গেটে।”
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,
“আশার কথা হলো, বাংলাদেশের জনগণ এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সচেতন। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে, কারা ঘটিয়েছে তা বুঝতে জনগণের বাকি থাকবে না।”
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া:
এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে এক ধরনের “সতর্কতা বার্তা” হিসেবে দেখছেন। সরকারের একজন উপদেষ্টার কাছ থেকে প্রকাশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন বিস্ফোরক, সাহসী এবং স্পষ্ট ভাষার মন্তব্য বাংলাদেশে বিরল ঘটনা। এটি কেবল সরকারের অভ্যন্তরে বিদ্যমান উত্তেজনারই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় তথ্য নিরাপত্তার হুমকিকেও সামনে নিয়ে এসেছে।
এদিকে পোস্টটির পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থন এবং উদ্বেগ উভয়ই প্রকাশ করছেন সাধারণ নাগরিক ও বিশিষ্টজনেরা।
এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।