স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার শুরুতেই অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। মৌলিক কিছু সংস্কার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ আলোচনার পরও সমঝোতায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। এতে করে পুরো প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এনসিপি সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ঐকমত্যের প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে শঙ্কা আছে। মৌলিক সংস্কারের জায়গায় বিএনপি ও তার সঙ্গে কয়েকটা দল ভিন্নমত পোষণ করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনার পরও অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে।’
সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগ বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবে বিরোধিতা এসেছে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিনের কাছ থেকেও। তিনি বলেন, ‘কমিটি ২ জনের নাম প্রস্তাব করবে, রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেবেন—এই ব্যবস্থাতেও বিএনপির আপত্তি আছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একই বিষয়ে বারবার আলোচনা হচ্ছে, তিন দিন ধরে। আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে ঐকমত্য প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলো নিয়ে সনদ হোক, আর যেগুলো হবে না, সেগুলো বাদ দেওয়া হোক।’
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘কমিটিগুলো যেন কাউকে লক্ষ্য করে করা না হয়। এ দেশে একমাত্র ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ। অন্য দলগুলো ক্ষমতায় থাকলেও ফ্যাসিবাদী আচরণ করেনি।’
১২ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দিলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে না।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আজকের আলোচনায় নতুন কিছু নেই। এসব নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছানো এখনও প্রায় অসম্ভব হয়ে আছে। বিএনপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘যেসব দল প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছে, তারা যেন বিষয়গুলো নিয়ে দলে আলোচনা করে চূড়ান্ত অবস্থান জানায়।’ তার বক্তব্যের পর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, যদিও তারা আগেই একমত ছিল।
দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে দ্বিকক্ষ সংসদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সিপিবি ও বাসদ এর বিরোধিতা করলেও অধিকাংশ দল উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে মত দেয়। প্রস্তাবিত ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ নিয়ে বেশিরভাগ দল একমত হলেও জেএসডি ও বাংলাদেশ জাসদ ২০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ চায়।
উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে মত দেয় অধিকাংশ দল। তবে বিএনপি, এনডিএম, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এতে দ্বিমত প্রকাশ করে।
জাভেদ রাসিন অভিযোগ করেন, ‘সকাল ১১টা থেকে শুরু করে তিন ঘণ্টা আলোচনা চলে। কিন্তু বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদের অবস্থানেই এসে আলোচনা বারবার আটকে যায়। বিকালেও ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আলোচনা হয়, কিন্তু একই জায়গায় আটকে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখি—আগে আপনারা প্রস্তাবগুলো বিএনপি বা সালাহউদ্দিন ভাইয়ের কাছে পাঠান। তারা যেটাতে একমত সেটা হাউজে আনেন, এরপর আলোচনা হোক। না হলে এভাবে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নিম্নকক্ষের অনুপাতে যদি উচ্চকক্ষ গঠন করা হয়, তাহলে সেটি কেবল নিচের কক্ষের প্রতিফলন হবে। যদিও আমরা এখন নিম্নকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির কথা বলছি না, তবে উচ্চকক্ষে এ পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে।’