স্টাফ রিপোর্টার:
নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের আড়ালে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর সাবেক কর্মচারী আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ মতে, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগপন্থী প্রভাব ব্যবহার করে ঘুষ, তদবির বাণিজ্য ও নানা অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেন ঢাকার আশুলিয়ার শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা। তার পিতা মৃত আব্দুল হালিম। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে একসময় রাজউকে মাস্টার রোলে চাকরি পান। এরপর উচ্চপদস্থ নেতাদের তদবিরে সরকারি চাকরিতে স্থায়ী হন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধ আর্থিক লেনদেন, ঘুষ গ্রহণ ও তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে রাতারাতি হয়ে ওঠেন কোটিপতি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেন ও তার পরিবারের নামে ঢাকার অভিজাত এলাকা যেমন গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা ও পূর্বাচলে রয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট। এছাড়া গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় নামে-বেনামে জমি ও বহুতল ভবনও রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে গরুর খামার, হাসপাতাল, কলোনি, ঝুট গোডাউন, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমনকি একাদশ শ্রেণির ছেলেকে দিয়ে কলেজে যাতায়াত করানো হচ্ছে ব্যক্তিগত কোটি টাকার গাড়িতে, আর মেয়েকে উপহার দিয়েছেন ৮ তলা ভবন।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরও জানা যায়, আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বাইপাইল শাখার মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন করতেন। এসব লেনদেনের গোপনীয়তা রক্ষায় তিনি ব্যাংকটির মালিক পক্ষের সন্তান মো. মশিউর রহমান চমকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং জমি ব্যবসার অংশীদার করেন। তারা গাজীপুরের মাধবপুর দক্ষিণ পানিশাইল মৌজায় ১৬০ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া আশুলিয়ার সুবন্ধি এলাকায় স্থানীয় মনতাজ মেম্বারের সঙ্গে যৌথভাবে কিনেছেন কয়েক বিঘা জমি।
আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, প্রথম স্ত্রী কোহিনূর এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন। আয়কর রিটার্নে সম্পদের প্রকৃত তথ্য গোপন করে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে।
বিশেষ সূত্রের তথ্যমতে, আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেন ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট, গুলশানে একটি বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট, বনানীতে একটি বাড়ি, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে বাড়ি, পূর্বাচলে ১০ কাঠার একাধিক প্লট, গাজীপুরের মাধবপুরে ১৬০ শতাংশ জমি, গাজীপুর মৌজারমিলে ৮ তলা ভবন, আশুলিয়ার শ্রীপুরে ৬-৭টি শ্রমিক কলোনি, কোহিনূর এগ্রো নামে বিশাল গরুর খামার, শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ডে বাবার নামে হালিম জেনারেল হাসপাতাল এবং সুবন্ধি এলাকায় একাধিক বিঘা জমির মালিক হয়েছেন।
এছাড়া তার জামাই, ধামরাইয়ের রঘুনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী দোসর এবি এম মাসুদকে ব্যবহার করে এসব সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আরও জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদের ওপর সহিংসতা চালানোর জন্য অর্থ সরবরাহ করেছিলেন আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেন। তার বিরুদ্ধে তখন কয়েকটি হত্যা ও হত্যা চেষ্টার মামলাও হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী জানান, আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগও প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া তার সম্পদের উৎস যাচাইয়ের জন্য আদালতে রিট দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আওয়ামী দোসর সোহরাব হোসেনের মোবাইল নম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে এবং পরবর্তী সংখ্যায় আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।