ঢাকার কেরানীগঞ্জে ট্রাফিক ইনস্পেক্টর মুজিবের বেপরোয়া মাসোহারা বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার:


২০২৫ সালের ৫ আগস্টের পর জনগণের মধ্যে আশা জেগেছিল—দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে, ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হবে, অপরাধ কমবে। অনেকে একে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে অনেক জায়গাতেই সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ঘুষ ও দুর্নীতির পুরনো সংস্কৃতি এখনো বহাল তবিয়তে চলছে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যদের আচরণে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না।

এরই জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের কদমতলী ট্রাফিক বিভাগের ইনচার্জ (টিআই) মুজিব। স্থানীয়দের অভিযোগ—তিনি ঘুষ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তার অধীনে চলমান রয়েছে মাসিক মাসোহারা বাণিজ্যের এক বিশাল চক্র। অভিযোগ রয়েছে, নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা না দিলে যানবাহন মালিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো মামলা দায়ের করা হয়। অথচ যারা নিয়মিত ঘুষ প্রদান করে, তারা আইনের তোয়াক্কা না করেই যানবাহন যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখে, রুট বা রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কোনো নিয়ম মানে না।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ‘জননী’ পরিবহনের অন্তত ১৪০টি গাড়ি, দক্ষিণ বঙ্গের প্রায় সকল বাস কোম্পানি, শ্রীনগর থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত চলাচলকারী ‘আব্দুল্লাহপুর পরিবহন’-এর শতাধিক মিনিবাস, বেতকা পরিবহন, জিএম পরিবহন, লেগুনা, এমনকি ব্যাটারি চালিত রিকশা পর্যন্ত—প্রতিটি যানবাহনের মালিক বা চালকদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে ঘুষ আদায় করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন মালিক বলেন, “যদি নিয়ম মানি বা গাড়ি ঠিকঠাক রাখি, তারপরও যদি মাসোহারার টাকা না দিই, তাহলে নানা অজুহাতে মামলা দেওয়া হয়। প্রতিদিন কাজে বের হলেই টিআই মুজিবের লোকজন তদারকি করে কে টাকা দিল, কে দিল না। বাধ্য হয়েই আমরা এই মাসোহারা দিয়ে চলি।”

আরেক পরিবহন মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্নীতি কমবে। জনগণ খোলা মনে কাজ করতে পারবে, ঘুষ দিতে হবে না। কিন্তু না, সবকিছু আগের মতোই আছে। শুধু উপরের চেহারাটা বদলেছে, নিচের চিত্র সেই আগের মতোই রয়ে গেছে।”

এ বিষয়ে টিআই মুজিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আপনারা একদিন এসে চা খেয়ে যান, তখন সব বুঝতে পারবেন।”

তবে স্থানীয়রা বলছেন, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও টিআই মুজিব বছরের পর বছর একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন—এতেই প্রমাণ হয়, তার পেছনে শক্ত রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক মদদ রয়েছে।

যখন সরকার পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন সেক্টরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে, তখন কেরানীগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এমন অনিয়ম প্রশ্ন তুলছে পুরো প্রশাসন ব্যবস্থার ওপর। জনমনে প্রশ্ন—আসলে কি সত্যিকার পরিবর্তন এসেছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *