পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী নাম ব্যবহার করে পুলিশের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে:

চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে ঘটে যায় চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা। স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী পরিচয় দিয়ে থানায় প্রবেশ করে এবং আচমকাই কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে আত্মরক্ষার জন্য লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ২৩ জন আহত হন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই ঘটনায় পটিয়ায় বহিরাগত কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার উপস্থিতি ছিল। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের প্রথম সহসভাপতি শম্ভু নাথ, যিনি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত। স্থানীয় জনতা ও বৈষম্যবিরোধী কর্মীরা অভিযোগ করেন, শম্ভু নাথ পটিয়ায় অবস্থান করে একটি গুপ্ত তালিকা তৈরি করছিলেন, যেখানে ২০ জন ছাত্রকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়।

এরপর পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ ওই নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সরাসরি থানায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে।

ঘটনার সময় আহতদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী তৌকির, মোহাম্মদ আশরাফ ও শাফি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরা সবাই পটিয়ায় পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পটিয়ার সাধারণ মানুষ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “যদি পুলিশেরই নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে?” তারা আরও জানান, হামলায় অংশ নেওয়া সবাই ছাত্রলীগের পরিচিত মুখ। অথচ ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি মহল তাদের বৈষম্যবিরোধী কর্মী হিসেবে চালানোর অপচেষ্টা করছে।

ছাত্র প্রতিনিধি তালহা রহমান ও সাইফুল ইসলাম জানান, পটিয়া থানায় পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় জনতা প্রায় ২০ জন দুষ্কৃতকারীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। এদের অধিকাংশই ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জায়েদ নূর বলেন, “ঘটনার সময় পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিল। বহিরাগত ও স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রলীগ কর্মী থানায় ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পুলিশ আত্মরক্ষায় বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করে।”

তিনি আরও বলেন, “আহতদের মধ্যে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আছেন। এখনো কেউ আটক হয়নি, তবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, পাঁচ দিন ধরে পটিয়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একটি অংশের পুলিশবিরোধী মনোভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারা প্রকাশ্যেই পুলিশকে হুমকি ও গালিগালাজ করছিল। মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘটনা যে কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ও দখলবাজি থেকেও উৎসারিত, তা স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়—আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন কীভাবে এই অরাজকতা সামাল দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *