যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিলের পদক্ষেপ

স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিলের কঠোর পদক্ষেপ শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ, গ্যাং সংশ্লিষ্টতা, আর্থিক জালিয়াতি ও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় তথ্য গোপনের মতো অভিযোগে যেকোনো নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে মিডলইস্ট আই জানায়, ১১ জুন ২০২৫ তারিখে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে—জাতীয় নিরাপত্তার সম্ভাব্য হুমকি বিবেচনায় এনে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, এসব সিদ্ধান্ত এখন থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একক ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। এর আওতায় ইতোমধ্যে প্রবাসী ফিলিস্তিনপন্থি অ্যাকটিভিস্ট মাহমুদ খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।

জন্মভিত্তিক নাগরিকত্বেও আঘাত

এই উদ্যোগের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব নিয়েও নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

২০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প নির্দেশ দেন, অবৈধ অভিবাসী বা অস্থায়ী ভিসায় অবস্থানরত অভিভাবকদের শিশুদের আর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। যদিও আদালতের স্থগিতাদেশে তা তখনই কার্যকর হয়নি, তবে ২৭ জুলাই থেকে এটি কার্যকরের পথে রয়েছে, কারণ সুপ্রিম কোর্ট ‘নেশনওয়াইড ইনজাংশন’ স্থগিত করেছে।

আতঙ্কে অভিবাসী সম্প্রদায়

এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নাগরিকত্বপ্রাপ্ত হিস্পানিক ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের ভুলক্রমে গ্রেফতার ও হয়রানির ঘটনাও বাড়ছে।

এছাড়া, ভোটার তালিকা যাচাইনাগরিক তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি জাতীয় ডেটাবেস তৈরি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সমালোচকদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বহুকাল ধরে চলা ‘অভিবাসনভিত্তিক রাষ্ট্রনীতি’ বদলে দেওয়ার পদক্ষেপ।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাড়ছে উদ্বেগ

এই নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি অভিবাসী, শিক্ষার্থী এবং সাময়িক ভিসাধারীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে—

  • যাদের নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া এখনো চলমান,

  • যাদের অস্থায়ী ভিসা বা গ্রিন কার্ড রয়েছে,

  • এবং যারা সন্তান জন্মের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন—
    তাদের জন্য এই নীতির পরিবর্তন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের উচিত—আইনি কাগজপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা, নিয়মিত হালনাগাদ রাখা, এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ অভিবাসন আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া।

অভিবাসন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তগুলো আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *