রাউজান হাইওয়ে পুলিশের ‘নতুন কায়দার চাঁদাবাজি’ বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও মামলা

কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সারা দেশে শুরু হলেও চট্টগ্রামের রাউজান হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়নি সাধারণ পরিবহন শ্রমিকরা। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ উল্লাহর নেতৃত্বে রাউজান হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ‘ভিন্ন কৌশলে’ চাঁদা আদায়ের বিস্তৃত অভিযোগ।

স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রাউজান হাইওয়ে পুলিশ দিনে ও রাতে আলাদা কৌশলে সিএনজি, টমটমসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। তাদের অভিযোগ— এখন আর আগের মতো ‘টোকেন পদ্ধতিতে’ সরাসরি টাকা আদায় না করে চালকদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মামলা দিয়ে হয়রানি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

বৈধ কাগজ থাকার পরও মামলা!

ভুক্তভোগী সরওয়ার ইসলাম, একজন সিএনজি চালক, জানান— “আমার বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে, গাড়ির সব কাগজও আপডেট। কিন্তু তাও আমাকে রাউজান হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে। পরে বলা হয়, আমার কাছে ‘ত্রি-হুইলার ক্যাটাগরির’ লাইসেন্স নেই। অথচ আমি বহু বছর ধরে এই একই লাইসেন্সেই গাড়ি চালাচ্ছি।”

সরওয়ার অভিযোগ করেন, হাইওয়ে পুলিশের টোকেন সিস্টেমে টাকা না দেওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। “ওরা কাগজ ঠিক থাকলেও নতুন অজুহাতে মামলা দেয়, যেন বাধ্য হয়ে চালকরা টাকা দিতে বাধ্য হয়,” বলেন তিনি।

অভ্যুত্থান পরেও অপরিবর্তিত চাঁদাবাজি

স্থানীয়দের অভিযোগ, জুলাই ২০২৪-এর রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশে প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযানে দুর্নীতি কমলেও রাউজান হাইওয়ে থানায় সেই সংস্কার স্পষ্ট হয়নি। আগে যেখানে প্রতি গাড়িতে ৩০০ টাকা হারে ‘টোকেন’ নেওয়া হতো, এখন সেটি দ্বিগুণ হারে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিএনজি ও টমটম মালিক-শ্রমিকদের অনেকেই জানান, নিরুপায় হয়ে তারা স্থানীয় সংগঠনের মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা দিয়ে দেন। না দিলে গন্তব্যে পৌঁছানোই হয়ে ওঠে কষ্টকর, কারণ পুলিশ নানা অজুহাতে মামলা বা জব্দের ভয় দেখায়।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে রাউজান হাইওয়ে থানায় সরেজমিনে গেলে ওসি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “প্রতিদিন সাংবাদিক, সংগঠন নেতা, অনেকেই আমাদের কাছে এসে দাবি করেন— মানসিক চাঁদা দেন। তাহলে কী আমি বাড়ি থেকে এনে দেব?”

প্রতিনিধির পাল্টা প্রশ্ন ছিল, “আপনি নিজে কখনো আমাকে বা আমার মতো সাংবাদিককে টাকা দিয়েছেন?” জবাবে ওসি বলেন, “আপনি না এলেও আপনার সাংবাদিক ভাইয়েরা তো আসেন।”

এই পর্যায়ে প্রতিনিধি আরও বলেন, “আপনি টাকা দেন কেন? নিশ্চয়ই আপনাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য যেন প্রকাশ না পায়, সে কারণেই তো।” জবাবে ওসি চুপ থাকেন।

প্রশাসনের অবস্থান

এই বিষয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি বলেন, “হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারও করা হতে পারে।”

শেষ কথা

জুলাই বিপ্লবের পর জনতার প্রত্যাশা ছিল— মাঠপর্যায়ের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ হবে। কিন্তু রাউজানের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ভুক্তভোগীরা এখন প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন, রাউজান হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *