স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, “দিনের ভোট রাতে হয়ে গেছে”। তিনি বলেন, “তৎকালীন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে ও প্রশাসনের সহযোগিতায় এই অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।”
মঙ্গলবার (২ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার অভিযোগে বিএনপির দায়ের করা মামলায় তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন।
ভোটের অনিয়ম ও দায়ের প্রসঙ্গ
জবানবন্দিতে নূরুল হুদা বলেন, “নির্বাচনের পরে জানতে পারি, কিছু কেন্দ্রে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিছু কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স রাতে ভরে ফেলা হয়েছিল। এসব ঘটনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা ঘটিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ও আমার কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অন্ধকারে ছিলাম। গেজেট প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন বাতিল করার আর কোনো আইনি সুযোগ ছিল না। এ বিষয়ে আমি একাধিকবার মিডিয়ার সামনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি।”
রিটার্নিং অফিসার ও ইসি সচিবের ভূমিকা
নূরুল হুদা আরও অভিযোগ করেন, “নির্বাচনে নিয়োজিত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন তৎকালীন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের নিয়ন্ত্রণে। সচিব প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের প্রভাবিত করতেন।”
ভাগিনার নির্বাচন প্রসঙ্গে বক্তব্য
সাবেক সিইসি আরও বলেন, “আমার ভাগিনা এসএম শাহজাদা আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেছিল। যদিও আমি এতে জড়িত ছিলাম না, কিন্তু আত্মীয়তার কারণে হয়তো কিছুটা সুবিধা পেয়েছে।”
পিবিআই তদন্ত ও মামলার অগ্রগতি
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কেএম নূরুল হুদাকে গত ২২ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর দু’দফায় আট দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর পরিদর্শক সৈয়দ সাজেদুর রহমান জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করলে, তা গ্রহণ করেন আদালত। জবানবন্দি শেষে নূরুল হুদাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, একই মামলায় ২৫ জুন মগবাজার এলাকা থেকে আরেক সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তার তিন দিনের রিমান্ড শেষে তিনিও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনারের এই স্বীকারোক্তি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘদিনের অভিযোগকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে সরকারি কোনো মন্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।