ইসলাম উদ্দিন তালুকদার:
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন “দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে” (DSSSUDP) অর্থ লোপাট, সিন্ডিকেট, পক্ষপাতমূলক ঠিকাদারি এবং রাজনৈতিক দলে অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে সুবিধা নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে আছেন প্রকল্প পরিচালক মো. খালিদুজ্জামান—যিনি আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এই প্রকল্পে যোগদান করেন এবং নানা বিতর্কের জন্ম দেন।
প্রকল্প অফিস ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গোপালগঞ্জে’?
প্রকল্পের সদর দফতর স্থাপিত হয়েছে গোপালগঞ্জে—যা অনেকের মতে, রাজনৈতিক পক্ষপাতের ইঙ্গিতবাহী। এই জেলাটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মভূমি। সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে, কেন একটি জাতীয় প্রকল্পের কার্যালয় দেশের কেন্দ্র বা উপযোগী স্থানে না রেখে একটি রাজনৈতিকভাবে ‘সংবেদনশীল’ এলাকায় করা হলো?
‘গরু-ছাগল বিতরণে সিন্ডিকেট, লটারির নামে প্রহসন’
প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জেলেদের মাঝে গরু-ছাগল বিতরণের কথা থাকলেও সেখানে চলছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। প্রকল্প অনুযায়ী, লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে যারা পরিচালকের ‘অনুগ্রহ’ পায়, তারাই কাজ পাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকৃত দরিদ্র উপকারভোগীদের বদলে দলের সুবিধাভোগী লোকদের নামেই গরু-ছাগল বিতরণ হচ্ছে।
খাঁচায় মাছ চাষে নেই জবাবদিহি
‘খাঁচায় মাছ চাষ’ প্রকল্পে কোটি টাকা খরচ হলেও, স্থানীয় জেলেদের স্বাবলম্বী হওয়ার কোনো নজির এখনও পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানকারীরা বলছেন, এটি আসলে একধরনের টাকা লোপাটের কৌশল—যেখানে প্রকৃত কাজের চাইতে বিল উত্তোলনই মুখ্য।
‘ভুয়া অভয়াশ্রম’ ও ‘দৃষ্টিনন্দন নয়, দুর্নীতিনন্দন খাল খনন’
অভয়াশ্রম নামে বরাদ্দ পাওয়া অর্থে এমন সব জায়গায় মাছের সংরক্ষণ কেন্দ্র করা হয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোরই বাস্তব কার্যকারিতা নেই। অভয়াশ্রম তৈরিতে খরচ করা হয়েছে লাখ লাখ টাকা, অথচ বাস্তবে সামান্য কাঠামো ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় সে অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঠিক একইভাবে, খাল খননের নামেও চলে আসছে মোটা অঙ্কের বিল উত্তোলন, যদিও বাস্তব খনন কার্যক্রম অত্যন্ত নিম্নমানের।
রাজনৈতিক রূপান্তর: ৫ আগস্টের পর বিএনপি ঘনিষ্ঠ?
৫ আগস্টের পর মো. খালিদুজ্জামান নিজের রাজনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন এনে বিএনপি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বলেও স্থানীয় সূত্র জানায়। এতে দুই পক্ষের মধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক দোলাচলে নিজেকে রক্ষার কৌশল হিসেবেই এই ‘পালাবদল’ ঘটিয়েছেন তিনি।
তথ্য জানতে চাওয়ায় কর্মকর্তাদের গড়িমসি
এই প্রতিবেদনের জন্য মো. খালিদুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে বলেন, “আপনি আপনার ইচ্ছামতো লিখুন।” অন্যদিকে, মৎস্য ভবনের মহাপরিচালকের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে মৎস্য ভবনে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি; কর্মকর্তারা জানান, তিনি চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন।
জেলেদের আহ্বান: “এই কর্মকর্তা আইনের আওতায় আসুন”
স্থানীয় জেলেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই প্রকল্পে আমাদের জন্য কিছুই নেই, শুধু দুর্নীতি। গরিবদের নাম ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একদল সুবিধাবাদী। ওই প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় এনে অপসারণ করা হোক।” কেউ কেউ বলেন, “আপনারা সাংবাদিকরা একটু অনুসন্ধান করলে, ওনার অবৈধ টাকার পাহাড় খুঁজে পাবেন।”
ভবিষ্যত অনুসন্ধান জরুরি
একজন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে যদি কেউ এই প্রকল্পের ব্যয়ের বিবরণ, উপকারভোগীদের তালিকা এবং বাস্তব চিত্র তুলনা করেন, তবে প্রকল্পে অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ধরনের ফারাক পাওয়া যাবে।