স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:
চেতনাবাদের নামে রাষ্ট্রীয় নাটকীয়তা ও সুবিধাবাদী রাজনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক মন্তব্য পোস্টে তিনি বলেন, “চেতনা কখনও চাপিয়ে দেওয়া যায় না—জাগাতে হয় হৃদয়ে, ত্যাগে, এবং উদাহরণে।”
ফেসবুক পোস্টে আনিস আলমগীর বলেন, “চেতনা গাছে ফলে না, আকাশে ওড়ে না—চেতনা মানুষ ধারণ করে। সেটি হোক একাত্তরের, কিংবা হোক জুলাই ২০২৪-এর। কিন্তু যখন জনগণ দেখে, ‘চেতনার’ নামে কিছু চেতনাবাজ রাতারাতি প্রভাবশালী ও ধনী হয়ে ওঠে, আইন তাদের ছুঁতে পারে না, থানায় হামলা চালানো হয় অথচ রাষ্ট্র দাঁড়ায় মবের পাশে—তখনই সেই চেতনা হয়ে ওঠে ব্যবসার পণ্য।”
তিনি বলেন, “একাত্তরের চেতনা যেমন সুবিধাবাদীদের হাতেই বন্দি ছিল, ঠিক তেমনি এখন জুলাইয়ের চেতনাও বন্দি হয়েছে নতুন সুবিধাবাদীদের হাতে। যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়েছিল, তারাই আজ ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ জন্য কোটা দাবি করছে। সংসদে ‘জুলাই শহীদ পরিবারদের’ জন্য আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব আসছে—যেন নতুন এক রাজবংশ তৈরি হচ্ছে।”
“চেতনাবাজি আজ রাজনীতি ও রাষ্ট্রের বিকল্প ড্রামা”
আনিস আলমগীর বলেন, “মুহাম্মদ জাফর ইকবাল যদি একাত্তরের পক্ষে বা ফরহাদ মজহার যদি জুলাইয়ের পক্ষে কলাম লেখেন, তাতে চেতনা জাগে না—বরং বিরক্তি জন্ম নেয়। কারণ চেতনা জাগাতে হয় আত্মত্যাগ আর ব্যক্তিগত উদাহরণ দিয়ে, কাগজে কলাম লিখে নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অনেক বিপ্লব—ইরানের ইসলামি বিপ্লব, ভেনেজুয়েলার বলিভার বিপ্লব, কিংবা মিসরের তাহরির স্কয়ার—প্রথমে চেতনার পতাকা তুলে ধরলেও পরে তা পরিণত হয় আরেকদল চেতনাবাজের দখলে। বাংলাদেশেও জুলাই চেতনাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে সেই চক্র, যারা নাটকীয় ঘোষণা, চাঁদাবাজি, বিভ্রান্তিকর কর্মসূচি আর মিডিয়া শোরুম দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎকে অস্থির করে তুলছে।”
“চেতনার নামে নাটক চলছে, উদাহরণ নেই—আছে শুধু স্লোগান”
আনিস আলমগীরের মন্তব্যে স্পষ্ট, তিনি মনে করেন “চেতনা চাপিয়ে দিলে তা ভোতা হয়ে যায়।” তার মতে, “জুলাইয়ের এক বছর না যেতেই মাসব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে সেই চেতনা জনগণের কাঁধে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ জনগণ বুঝে গেছে, আদর্শ চাপিয়ে দিলে তা টিকে না—এটি উদাহরণ, ত্যাগ ও আত্মমর্যাদায় ফুটে ওঠে। আর আমাদের সামনে এখন উদাহরণের অভাব—শুধু আছে স্লোগান, নাটক আর চেতনাবাজির নতুন ব্র্যান্ডিং।”
শেষে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে লেখেন, “জুলাই চেতনার এক বছরেই যদি এই হাল, আগামী বছর কী হবে—আল্লাহ মালুম।”