আসন বণ্টনে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখছে বিএনপির মিত্ররা

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দল ও জোটগুলোর মধ্যে আসন বণ্টন ও সমঝোতা নিয়ে আলোচনা জোরালো হচ্ছে। সমমনাদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতা বিশ্বাস করেন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘সঠিক ও যৌক্তিক’ সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই তারা বিষয়টি তার উপরই ছেড়ে দিতে আগ্রহী।

সূত্র জানায়, চলমান পরিস্থিতি, দল পুনর্গঠন ও জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে মিত্র দলগুলোর প্রতিনিধিরা। এসব বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আসন বণ্টন বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তিযুক্ত সমঝোতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি কৌশলগত কারণে এখনই আসন ভাগাভাগির প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছে না। দলের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে এমন অভিমত জানিয়েছেন অনেক শরিক নেতা।

বিএনপির প্রার্থীদের তৎপরতায় চাপা ক্ষোভ

মিত্র জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনে নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমনকি শরিক দলগুলোর শক্ত ঘাঁটিতেও বিএনপির লোকজন প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এতে মিত্রদের মধ্যে একটি চাপা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অনেকে বলছেন, নির্বাচনি সমঝোতা নিয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়া গেলেও, অন্তত মৌখিকভাবে শরিকদের নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় থাকার সুযোগ দেওয়া হোক।

তারা আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশ্বাস করলেও মাঠপর্যায়ে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়তে হতে পারে। সে কারণেই দলগুলো এখন হিসাবনিকাশ করেই এগোচ্ছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

বিএনপির আশ্বাস ও জাতীয় সরকারের ইঙ্গিত

বিএনপির নীতিনির্ধারক একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পাশে থাকা দল ও জোটগুলোকে বিএনপি যথাযথ মূল্যায়ন করবে। যদি ক্ষমতায় যেতে পারে, তাহলে জাতীয় সরকার গঠনের সময়ও এসব দলকে সম্মানজনক অংশীদারিত্ব দেওয়া হবে।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, বিএনপি এখনো দলীয়ভাবে বা শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করেনি। তিনি বলেন, “বিএনপি আমাদের জানিয়েছে, বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। এখন প্রস্তুতি চলছে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও গণসংযোগমূলকভাবে। চূড়ান্ত বোঝাপড়ার জন্য আরও কিছু সময় লাগবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি বলেছে, যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, তাদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চায়, তেমনি নির্বাচনও করতে চায়। এর ধরন, রূপরেখা এখনো নির্ধারিত নয়। তবে আমরা বলেছি—সরকার গঠনের আগে তো নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।”

মিত্রদের বক্তব্য: আস্থা ও সতর্কতা

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও এলডিপির চেয়ারম্যান ড. শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। আশা করি, বিএনপি আমাদের ভূমিকার যথাযথ মূল্যায়ন করবে।”

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “বিএনপি বলছে, সঠিক সময়েই আলোচনা হবে এবং শরিকদের সম্মানজনকভাবে আসন ছাড় দেওয়া হবে। নির্বাচন ও জাতীয় সরকার—এই দুটি বিষয়েই তারেক রহমান শরিকদের অংশীদার করতে চান বলে আমাদের জানিয়েছেন।”

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, “আসন বণ্টন নিয়ে হালকা আলাপ হয়েছে। চূড়ান্ত আলোচনা হবে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জোটকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে। আন্দোলনের অংশীদারদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। একই কথা বলেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।”

তিনি আরও বলেন, “আসন যদি কাউকে না-ও দেওয়া যায়, তাহলে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিকল্প প্রতিনিধি কাঠামো নিয়েও আলোচনা চলছে।”

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার তারেক রহমানের হাতে

লিয়াজোঁ কমিটির একাধিক বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি শরিকদের স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরপরই আসন ভাগাভাগি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু হবে। তবে এখনই কোনো দ্বন্দ্ব বা বিভ্রান্তি এড়াতে এই বিষয়টি বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনছে না। অনেক শরিক নেতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তারেক রহমানের ওপরই থাকবে। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই সর্বসম্মতভাবে মেনে নেওয়া হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

উপসংহার

একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও এর মিত্রদের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা চলমান। আসন সমঝোতা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও শরিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সময়মতো সম্মানজনক সমঝোতা হবে। কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন দেখার বিষয়, সময় ঘনিয়ে এলে তিনি কিভাবে এই সমীকরণে নেতৃত্ব দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *