স্টাফ রিপোর্টার:
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পালিয়ে গেলেও পালায়নি অনেক রাঘব বোয়াল। বর্তমানে আওয়ামী দোসররা বিভিন্ন ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় চালিয়ে যাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রচার প্রচারণা। যারা পরোয়া করছে না কাউকে, তাদের মধ্যে অন্যতম গোপালগঞ্জের গাজী মাসুদ। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছিল যার আয়ত্তে। টেন্ডার, নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি কথা বলে সাধারণ মানুষের থেকে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়াসহ এমন কোনো কাজ ছিল না যা করেননি এই মাসুদ। ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছেন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। হাসিনা পালিয়ে গেলেও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় বিন্দুমাত্র কমেনি তার প্রভাব বিস্তার।
পুলিশের আইজির শ্যালক পরিচয় দিয়ে পুলিশের বদলি এবং নিয়োগের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মীদেরকে মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বহু টাকা। তার বিষয়ে কেউ কিছু বললেই পুলিশের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেন এই গাজী মাসুদ। স্থানীয় প্রশাসন এবং উপরের মহলে তার লোক থাকায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগকে সে সংগঠিত করছে।
গত ০৫/০৬/২০২৫ তারিখে কুশলী ইউনিয়নে স্থানীয় নিরীহ কিছু মানুষ এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর গাজী মাসুদ এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ২০০/৩০০ লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এতে প্রায় ৮ জন মারাত্মকভাবে যখম হন এবং ২৫ জনের মতো মারাত্মক আহত হন, যাদের মধ্যে মারাত্মক আহত ৮ জন এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। আহতদের মধ্য থেকে একজন চিকিৎসা শেষে টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি সেই মামলা নেননি।
পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন শাহা করিম মোল্লা মাননীয় আদালতে মামলা করেন। মাননীয় আদালত টুঙ্গিপাড়া থানাকে সরাসরি এজাহার হিসেবে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মামলার ১ নম্বর আসামি গাজী মাসুদ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। মামলার বাদী শাহা আব্দুল করিম বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসিকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি ব্যস্ত আছি, পরে ফোন করেন।”
গাজী মাসুদ বর্তমানে ঢাকায় থেকে গোপালগঞ্জের দুর্নীতিবাজ হ্যাবেন লাইট-এর চেয়ারম্যান মাসুমের রক্ষাকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন মাসে মাসে বিপুল অঙ্কের টাকা। গাজী মাসুদ কোন যোগ্যতায় হ্যাবেন লাইটের মতো একটি দুর্নীতিবাজ বড় কোম্পানির অপারেশন ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন?
সূত্রে জানা গেছে, হ্যাবেন লাইট কোম্পানির অলক্ষিত পার্টনার সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবের বেশিরভাগ অবৈধ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
বিনিয়োগকৃত টাকার ভাগবাটোয়ারা করেন সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবের ভাগ্নে ও গাজী মাসুদ। দুজন মিলে রক্ষা করছেন মহাদুর্নীতিবাজ, এনবিআরের ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকির মামলায় জেল খাটা হ্যাবেন লাইটের চেয়ারম্যান মাসুমকে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরস্থ হ্যাবেন লাইট কোম্পানির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি ও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে, যা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় একটি ১৩ তলা আবাসিক ভবনে পরিবেশ ছাড়পত্র ও বাণিজ্যিক অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই কোম্পানির কার্যক্রম। হ্যাবেন লাইট কোম্পানি বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। এছাড়াও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ শিশুশ্রম, অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহার ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া এই ভবনে একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে যা দিয়ে উৎপাদিত পণ্য গোপনে সরবরাহ ও গুদাম ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অঢেল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাসুম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সাবেক ডিএমপি কমিশনারের ছত্রছায়ায় পাশ্ববর্তী এক অসহায় গরীব ব্যক্তির দুই কাঠা জায়গা থেকে এক কাঠা ভূমি জোর করে দখল করে নেয়। প্রতিবাদ করতে গেলে তখন সাবেক ডিএমপি পুলিশ কমিশনার হাবিব নানান ধরনের হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেন ভুক্তভোগীদের।
হ্যাবেন লাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান মাসুমকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে সব আসল তথ্য। এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী ও একটি মানবাধিকার সংস্থা দুদক, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে বলে জানা গেছে।