ভোলা প্রতিনিধি:
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নবম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর ভাইকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবক। নির্যাতনের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেয়াজানপুর গ্রামের তালুকদার চৌরাস্তা এলাকায়। নির্যাতনের শিকার জাহিদুল উপজেলার শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মাজেদ ঢালীর ছেলে।
জাহিদুল বর্তমানে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের জানান, অভিযুক্ত তুহিন তার পূর্বের বন্ধু ছিল। সে দীর্ঘদিন ধরে জাহিদুলের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। পরে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হলেও পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তুহিন ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে জাহিদুলকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালায়।
জাহিদুল জানান, গত শুক্রবার ভোরে তুহিন ফোন করে জানায়, সে সমস্যায় পড়েছে। বন্ধুর বিপদে ছুটে গিয়ে তালুকদার চৌরাস্তার কাছে পৌঁছালে অতর্কিত হামলা চালায় তুহিন, যুবদল নেতা ইমন তালুকদার, আমিনুল ইসলাম ও মো. সিদ্দিক। তারা জাহিদুলকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফ্লাশ লাইটের ব্যাটারির সাহায্যে হাত-পায়ের নখ তুলে নেয়। নির্যাতনে তিনি জ্ঞান হারালে তাকে পানিতে চুবিয়ে আবার নির্যাতন চালানো হয়।
জাহিদুল আরও অভিযোগ করেন, তার উপর চালানো নির্যাতনের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে এবং পরে তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টাও করে তারা। বারবার অনুনয় করলেও নির্যাতনকারীরা থামেনি।
পরে স্থানীয় এক রিকশাচালকের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে জাহিদুলের বাবা-মা ও স্থানীয় গ্রাম পুলিশ বজলু রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
জাহিদুলের মা আছমা বেগম বলেন, “তুহিন দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল। একপর্যায়ে মেয়েটি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। আমরা বিষয়টি তুহিনের পরিবারকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।”
জাহিদুলের বাবা মাজেদ ঢালী বলেন, “ঘটনার পর থানায় জানালে তারা আমাদের হুমকি দেয়—মেয়েকে এসিডে ঝলসে দেবে, ছেলেকে হত্যা করবে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। তুহিনের বাবা বেল্লাল হোসেন বলেন, “ঘটনাটি আমার জানা নেই। তুহিনও এখন বাড়িতে নেই।”
চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, “ঘটনাটি আমরা শুনেছি, পুলিশ পাঠিয়ে তথ্য যাচাই করা হয়েছে। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”