জুলাই গণহত্যায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করলেন সাবেক আইজিপি

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, “আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমি এই মামলায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজসাক্ষী হতে চাই।” ওই সময় তিনি জানান, গণহত্যা চলাকালীন তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং অনেক নির্দেশনা বাস্তবায়নে অংশ নিয়েছিলেন।

চৌধুরী মামুনের এই স্বীকারোক্তির ঠিক আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার তিনজন প্রধান অভিযুক্ত—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেয় এবং আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আদেশ দেয়।

এর আগে গত ১২ মে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অপারেশন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং পুলিশের প্রধান হিসেবে মামুন কৌশলগত ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষ হওয়ার পর ১২ মে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র জমা পড়ে এবং শুনানির ধারাবাহিকতায় আজ অভিযোগ গঠনের আদেশ ও মামুনের স্বীকারোক্তি আদালতে উপস্থাপিত হয়।

চৌধুরী মামুনের এই স্বীকারোক্তি মামলার গতিপথ পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন আইনি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাজসাক্ষী হিসেবে মামুনের ভূমিকা মামলার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে এবং উচ্চ পর্যায়ের অপরাধীদের দোষ প্রমাণে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন অধ্যায়, যেখানে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *