কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার ছদ্মবেশে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে কোটি টাকার ডিজিটাল প্রতারক চক্রের এক সদস্য নরসিংদীর ঘোড়াদিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ছদ্মবেশে অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করা। দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অনলাইনে সাধারণ মানুষের WhatsApp হ্যাক করে সরকারি কর্মকর্তাদের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে কৌশলে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রতারণা চালাতে তারা মসজিদে বা অফিসে এয়ার-কন্ডিশনার (এসি) লাগবে, উন্নয়নমূলক কাজ হবে, অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তা দরকার, এতিম খানায় সহযোগিতা প্রয়োজন—এমন বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে মানুষের কাছে টাকা চায়। অনেকেই সরল বিশ্বাসে প্রতারকদের অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করেছে।
ঘটনাটি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের নজরে আসলে জেলা পুলিশ ফেসবুক পেইজে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা গোয়েন্দা শাখা তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান শুরু করে।
অনুসন্ধানে প্রতারক চক্রের সদস্য শরীফুল ইসলাম (পিতা: শাখাওয়াত হোসেন, মাতা: মমতাজ বেগম, গ্রামের – ঘোড়াদিয়া, থানা ও জেলা – নরসিংদী) শনাক্ত করে গত ০৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে নরসিংদী সদর থানাধীন ঘোড়াদিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে তার বাসা থেকে নগদ ৪ লক্ষ টাকা, পাসপোর্ট, নকল ট্রেড লাইসেন্স, সীল, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, প্রতারণায় ব্যবহৃত ৮টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন অপারেটরের সিম, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও জমা বই, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ, বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডির কপি এবং অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
তার নিকট থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইলের WhatsApp কথোপকথন ও অন্যান্য ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতারক চক্রের সহযোগিতায় তিনি ও তার ভাই দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবসার আড়ালে হুন্ডি ব্যবসা, অনলাইন জুয়া ও প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়সহ বিভিন্ন এমএসএফ অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন করছিল।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বড় ভাই আরিফুর রহমান ও তার বন্ধুসহ পরিবারের কিছু সদস্য মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে প্রতারণাপূর্বক অন্য ব্যক্তিদের সহায়তায় অজ্ঞাতদের WhatsApp একাউন্ট হ্যাক করে নিজেদের পরিচিতদের নামে সিম ও বিকাশ/নগদ/রকেট অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা সংগ্রহ করতেন।
অপরদিকে তারা ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকে নামে-বেনামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন করছিল।
এই ঘটনায় Social Media, WhatsApp ও বিকাশ/উপায়/রকেট/মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কোনো অচেনা ব্যক্তি সরকারি কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বা বাহিনীর লোগো ব্যবহার করে কল করে টাকা দাবি করলে অবিলম্বে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন।