স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই আলোচনা “সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে” পৌঁছেছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, অতীতে এমন আশাবাদী আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।
সম্প্রতি, হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে এবং এই সময়কালে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনাও চালানো হবে। তবে, চূড়ান্ত চুক্তি নিয়ে এখনো তীব্র মতবিরোধ অব্যাহত রয়েছে। সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট জানিয়েছেন, হামাস সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে না। তিনি বলেন, “এটি তাদের হাতে শেষ সম্পদ, এবং তারা শুধু তখনই তা মুক্তি দেবে যখন তারা নিশ্চিত হবে যে যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।”
জীবনাবধি যুদ্ধ বন্ধের দাবি:
ওলমার্ট বলেন, গাজায় হামাসের কর্তৃত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল লড়াই বন্ধ করবে না। তার মতে, “হামাস চায় যুদ্ধের পূর্ণ অবসান এবং ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, আর ইসরাইল চায় হামাসের ক্ষমতার কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করতে।”
তিনি আরও বলেছেন, “চূড়ান্ত শর্তাবলীতে এখনো মতবিরোধ রয়েছে। হামাস যেহেতু তাদের ক্ষমতার কাঠামো ধ্বংস হতে দেখতে চায়, ইসরাইল যুদ্ধ থামাতে রাজি হবে না যতক্ষণ না হামাসের শক্তি পুরোপুরি ধ্বংস না হয়।”
ট্রাম্পের ভূমিকা ও নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ:
ওলমার্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকাকেও প্রশ্ন করেছেন। তিনি বলেন, “এটা একটা বড় প্রশ্ন— ট্রাম্প তার বিশাল প্রভাব কতটা ব্যবহার করতে পারেন নেতানিয়াহুকে বাধ্য করতে এবং যুদ্ধ থামিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে যা ভবিষ্যতে সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পারে?” তিনি বলেন, “ট্রাম্প আসলে কী করবেন, সেটা কে বলতে পারে?”
তবে, ওলমার্ট বলেন, “নেতানিয়াহুকে দাবিগুলো মানতে ট্রাম্প বাধ্য করতে পারেন, ট্রাম্পের সেই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আছে।” তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের জনগণের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। ওলমার্ট জানান, বেশিরভাগ ইসরাইলি আজই যুদ্ধ শেষ দেখতে চান এবং তারা চান জিম্মিরা দ্রুত মুক্তি পাক। তিনি বলেন, “যদি ট্রাম্প এ দিক থেকে চিন্তা করেন, তাহলে তিনি দেখতে পাবেন যে, ইসরাইলিদের একটি বড় অংশ তার পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে চায়।”
মানবিক ক্ষয়ক্ষতি এবং যুদ্ধের অপ্রয়োজনীয়তা:
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মানবিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু এই ভয়াবহ যুদ্ধের মূল্য দিচ্ছে— যে যুদ্ধ হামাস শুরু করেছিল।” তিনি আরও জানান, “এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জিম্মিদের মুক্তি, কারণ বর্তমানে চলমান যুদ্ধের কোনো স্পষ্ট লক্ষ্য আর অবশিষ্ট নেই।”
ওলমার্ট জানান, হামাস আর কোনো অর্থবহ সামরিক হুমকি নয় এবং ইসরাইল হামাসের সামরিক ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। “এটি আর ইসরাইলের জন্য বড় কোনো হুমকি নয়,” বলেন তিনি। তিনি সতর্ক করেন, “যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এখন অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। যদি আরও ইসরাইলি সেনার প্রাণহানি হয় এবং হামাসের হাতে থাকা ৫০ জন জিম্মির জীবনহানি হয়, তাহলে এটা আর মূল্যবান নয়।”
গাজা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবস্থান:
ওলমার্ট গাজাকে “ফিলিস্তিনিদের” ভূমি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের পক্ষে নই। গাজা ফিলিস্তিনিদের, তারা সেখানেই বাস করে এবং ওখানেই তাদের থাকা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে।”
নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক বৈধতা:
ওলমার্ট নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, “যদিও নেতানিয়াহু এখনো সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছেন, তবে এই পার্লামেন্ট সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছেন প্রায় তিন বছর আগে। তারা এখনকার ইসরাইলিদের মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে না।” তিনি আরও জানান, “সব জরিপেই দেখা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশের বেশি ইসরাইলি নেতানিয়াহুকে বিশ্বাস করে না এবং তাকে সমর্থন করে না।”
নতুন কণ্ঠস্বর ও রাজনৈতিক পরিবর্তন:
ওলমার্ট বলেন, “আমি মনে করি, এখন ইসরাইল থেকে একটি নতুন কণ্ঠ উঠে আসছে— সহানুভূতির, সমঝোতার, সহনশীলতার, আর এক ঐতিহাসিক সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সহযোগিতার ইচ্ছার কণ্ঠ। আর নেতানিয়াহু এর অংশ হতে পারে না। তাকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে এবং সে বিদায় নেবে; আমি আশা করি সেটা খুব শিগগিরই হবে।”