ঘুমিয়ে গেল আদুরী: একই দিনে জন্ম, মৃত্যু ও ফলাফল

স্টাফ রিপোর্টার:

একদিকে পরিবারের জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত, অন্যদিকে এক অপূরণীয় বেদনা—এই দুই বিপরীত অনুভূতি একসাথে ধারণ করে চলছে বগুড়ার সারিয়াকান্দীর এক দরিদ্র পরিবার। কিশোরী আদুরী এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে সফলতা অর্জন করলেও সেই আনন্দের মুহূর্ত দেখা হয়নি তার। কারণ, ফল প্রকাশের আগেই জীবনটা হারিয়ে যায় বাঙ্গালী নদীর স্রোতে।

১০ জুলাই—আদুরীর জন্মদিন, এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন এবং একই সঙ্গে তার মৃত্যুদিন। নিয়তির এই নিষ্ঠুর পরিহাস কোনো কল্পকাহিনি নয়, বরং হৃদয় ভাঙা বাস্তবতা। ওইদিন স্কুলে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, আদুরী বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফল করেছে। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করছিল শুধু নিস্তব্ধ কবর।

রিকশাচালক বাবা মকবুল হোসেন মেয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “তুই পাস করেছিস মা, চোখের পানি আর দোয়া তোর সঙ্গেই দিলাম।” পাশে থাকা মা হালিমা বেগম আর বড় বোন সোহাগীর বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। হালিমা বেগম বলেন, “তোমরা জানো, আমার ময়না পাস করেছে। কিন্তু সে আজ পৃথিবীতে নেই। ও বলত, মা আমি পড়ালেখা করে পুলিশ হবো। আজ সব শেষ।”

বড় বোন সোহাগী বলেন, “আমরা একে অপরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলাম। এখন সে নেই, আমি একা কথা বলি, একা কাঁদি, একা ঘুমাই। তার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি।”

১০ জুন এক বান্ধবীর বিয়েতে গিয়ে বিকেলে গোসল করতে নামে আদুরী। সেখানেই হঠাৎ নদীর স্রোতে তলিয়ে যায় সে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার নিথর দেহ উদ্ধার করেন।

ক্যাপ্টেন মাল্টিমিডিয়া পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস খোকন বলেন, “আদুরী ছিল অত্যন্ত মেধাবী, শান্ত স্বভাবের ও স্বপ্নবান ছাত্রী। তার এমন অকাল মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে। তার অনুপস্থিতি অপূরণীয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *