স্বাধীন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অধীনে ‘স্ন্যাপব্যাক’ পদ্ধতিতে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের উদ্যোগ নেওয়া হলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘সমান ও যথাযথ জবাব’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। সোমবার (১৪ জুলাই) তেহরানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই।
তিনি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির সাম্প্রতিক হুমকির কড়া সমালোচনা করে বলেন, এসব দেশ ‘স্ন্যাপব্যাক’ পদ্ধতি সক্রিয় করে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের পুরোনো নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ করতে চাইছে, যা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
বাকাই বলেন, “ইউরোপীয়দের এই অবস্থান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্পষ্ট রাজনৈতিক চাল এবং এর সমান ও যথাযথ জবাব অবশ্যই দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল গত মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর মাধ্যমে ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থার রাজনৈতিক ও আইনি ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বাকাই বলেন, “এই পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ার এখন আর কোনো আইনগত, রাজনৈতিক বা নৈতিক ভিত্তি নেই। ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের মৌলিক দায়িত্ব উপেক্ষা করে এটি শুধু চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।”
তিনি জানান, ইরান এখনো ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে অঙ্গীকারবদ্ধ আছে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ‘মৌলিক লঙ্ঘনের’ কারণে তেহরানও বাধ্য হয়ে ধাপে ধাপে কিছু প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে।
বাকাই বলেন, “চুক্তির মূল পাঠে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, কোনো পক্ষ চুক্তিভঙ্গ করলে ইরান ধাপে ধাপে প্রতিশ্রুতি হ্রাস করতে পারবে।”
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ঐ চুক্তিটি স্বাক্ষর করে ইরান এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স—এছাড়া জার্মানি। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ২০২.৮ কেজির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে এবং তা কেবলমাত্র স্বল্প মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে পারবে।
তবে ২০১৮ সালের ৮ মে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং তেহরানের বিরুদ্ধে আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করেন।
চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়, ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনায় টানা ১২ দিনের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনায় আঘাত হানে। পরে ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।