গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘জুলাই পদযাত্রা’কে কেন্দ্র করে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক দফায় এই সহিংসতা চালানো হয়। হামলার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশে সরাসরি হামলা
বুধবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য এনসিপির কেন্দ্রীয় সমাবেশের মঞ্চে হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, সমাবেশ শুরুর ঠিক আগে একদল লোক সমাবেশস্থলে ঢুকে পড়ে এবং মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম, চেয়ার ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করে। এছাড়াও সমাবেশে আগত এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে অনেকে আহত হন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।”
ইউএনও’র গাড়ি বহরে হামলা
এর আগে, একই কর্মসূচিকে ঘিরে দুপুরে সদর উপজেলার গান্ধীয়াশুর এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসানের গাড়ি বহরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ইউএনও নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন উপলক্ষে তারা শহরে আসছিলেন। পথে গান্ধীয়াশুর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থকেরা গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে।”
এ ঘটনায় ইউএনওসহ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হামলায় অন্তত কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ
বুধবার সকালেও সহিংসতার আরেকটি নজির দেখা গেছে সদর উপজেলার উলপুর এলাকায়। এখানেও এনসিপির কর্মসূচি বানচালের চেষ্টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সড়ক অবরোধ
এছাড়াও সকাল থেকেই সদর উপজেলার গান্ধীয়াশুর এলাকার ঘোনাপাড়া–টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়কে গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিল ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা। ফলে কেন্দ্রীয় পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে এবং পুরো এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হয়।
রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে
গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ কেন্দ্র করে দিনভর সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও বাধাদানের ঘটনায় পুরো শহরজুড়ে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে বিভাজন এবং বিরোধী মতকে দমন করার প্রবণতা আশঙ্কাজনক মাত্রায় পৌঁছেছে।
এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এসব হামলা সুপরিকল্পিত। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, “গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা, পুলিশের গাড়ি পোড়ানো—সবকিছুই রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট বাহিনীর প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে ঘটছে।”
প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার একাধিক পর্যায়ে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাৎক্ষণিক কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধের প্রমাণ মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন এনসিপির নেতারা। বরং স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং পক্ষপাতমূলক অবস্থানের অভিযোগ তুলেছেন তারা।
সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
জুলাই মাস জুড়ে এনসিপির ঘোষিত কর্মসূচিগুলোকে ঘিরে সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।