গোপালগঞ্জে নিহতের ঘটনায় দায় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার: নাহিদ ইসলাম

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:  

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্তৃক আয়োজিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলায় চারজন নিহতের ঘটনায় দায়ভার সরকারের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের ওপরেই পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব এবং জীবিত থাকলে জেলার প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি গ্রামে কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জ নিয়ে আমাদের অবস্থান গতকালের বক্তব্যেই স্পষ্ট বলা হয়েছে। পুরো বাংলাদেশের প্রতি যেমন আমাদের কমিটমেন্ট রয়েছে, গোপালগঞ্জের প্রতিও আমাদের একই কমিটমেন্ট। আমরা গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্যের প্রবল বিরোধিতা করি। গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করতে চাই। আওয়ামী লীগ যুগ যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে দোসরিত্ব করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ অবস্থা পরিবর্তন করব।”

তিনি আরো জানান, “আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাইনি। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে আমাদের ওপর। একই রকম ঘটনা ঘটেছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়। আওয়ামী লীগ সবসময় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।”

নাহিদ আরও বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরও ৫ আগস্টের পরে অনেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ৫ আগস্টের পর আমরা বহুবার বলেছি, আমরা আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় জুলাই গণহত্যার বিচার চাই। কিন্তু ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক লোক গ্রেফতার হয়নি। যারা গ্রেফতার হয়েছে তারাও জামিন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।”

প্রশাসন ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিবাজ এবং ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে নাহিদ বলেন, “তারা টাকা দিয়ে কেনা যায়। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গতকাল গোপালগঞ্জে ছিল। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা সেভাবে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি। আমরা পদযাত্রা করিনি, শুধু পথসভা করেছি। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার আমাদের লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়নি। বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। এর পরও শান্তিপূর্ণ সভা শেষ করেছি। যাওয়ার পথে সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা। নিরাপত্তাবাহিনী যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে, আমরা সেভাবে সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি।”

চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়াについて তিনি বলেন, “আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না। সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ার আওতায় আনতে হবে।”

নাহিদ আরো বলেন, “যদি প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হত না। এ দায়ভার সরকার ও প্রশাসনের। আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারা দেশে এ গ্রেফতার অভিযান চালানো প্রয়োজন।”

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, “আমরা গোপালগঞ্জে যাব, শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে ঘোষণা করছি যে মুজিববাদকে গোপালগঞ্জ ও দেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না। আমরা জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি গ্রামে কর্মসূচি করব। গোপালগঞ্জের প্রতিটি ঘরে ঘরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ হবে মুজিববাদীদের নয়, বাংলাদেশপন্থিদের।”

তিনি বলেন, “শহীদ বাবু মোল্লার গোপালগঞ্জ, শহীদ রথীন বিশ্বাসের গোপালগঞ্জ আমরা পুনরুদ্ধার করব। মকসুদপুর, কোটালীপাড়া আমাদের শহীদদের কবরস্থান। এই মাটি মুজিববাদীদের হতে দেব না। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও মুজিববাদীর হবে না, ইনশাআল্লাহ।”

গতকালের হামলার প্রতিবাদে যারা রাস্তায় নেমেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, “ফরিদপুরে পদযাত্রায় দেখা হবে।”

এদিকে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভা শুরু হয়েছে। মঞ্চে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য দিচ্ছেন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মী-সমর্থকরা আসছেন। দুপুর দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। পূর্বের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পথসভাটি সকাল ১০টায় হওয়ার কথা থাকলেও বুধবারের পরিস্থিতির কারণে আড়াই ঘণ্টা পিছিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *