মোঃ সাইমুন ইসলাম:
কলাপাড়া উপজেলায় ২টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক—চোলাই মদ, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল! অভিনব কৌশলে এসব এলাকায় রমরমা নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতাপশালী একটি চক্র। মাঝে মাঝে প্রশাসন দু’একটি স্থানে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ দু’চারজনকে গ্রেফতার করলেও কলাপাড়ায় মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘সোর্স পরিচয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাদক স্পট থেকে নিয়মিত মাসোহারাও তোলা হচ্ছে। সোর্সদের নিয়মিত টাকা ও মাদকদ্রব্য দিলে অভিযানের আগেই মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয় তারা।’ ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানও মাঝে মাঝে ভেস্তে যাচ্ছে। এদিকে, উপজেলায় নিষিদ্ধ মাদকের ভয়াবহ বিস্তারে এলাকার অভিভাবক মহল চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞ মহলের মতে, নিষিদ্ধ মাদকের ভয়াল থাবা থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের চিহ্নিতপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় মাদকের ভয়াবহতা ও সুদূরপ্রসারী ক্ষয়ক্ষতির করাল গ্রাস থেকে কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলায় বিভিন্ন কুচক্রী মহল পাইকারি ও খুচরা নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শহর থেকে আগে পুরো উপজেলায় সর্বনাশা ইয়াবার চালানের যোগান দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে প্রকারভেদে প্রতিপিছ ইয়াবা ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ও খুচরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেকে নদীপথে, আবার অনেকে ইয়াবা বহনের কাজে কোমলমতি ছাত্র ও নারীদেরও ব্যবহার করে রমরমা এ অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ গাঁজা। এক টোপলা (ছোট কাগজের প্যাকেট) গাঁজা আনুমানিক ১০০/২০০ টাকা। এদিকে এলাকায় গাঁজা ও ইয়াবা সেবনের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ১ মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর সচেতন মহলের অভিযোগ, এসব মাদক দ্রব্য কুয়াকাটাসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে নিষিদ্ধ মাদক—হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল। এসব নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য সেবন করে একদিকে যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং অন্যদিকে মাদকসেবীদের পরিবারও ব্যাপক সম্মানহানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা যেখানেই মাদকের সন্ধান পাবো, আমাদের টিম সেখানেই ছুটে যাবে। এছাড়া নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানও পরিচালনা করছি। প্রায় প্রতিদিনই আমরা মাদক ব্যবসায়ী ও ছিচকে চোরদের গ্রেফতার করছি। আর সোর্সদের বিষয়ে আমরা আরও সতর্কাবস্থা অবলম্বন করেছি।”
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “নিষিদ্ধ মাদক—হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের ভয়াল থাবায় উপজেলায় ছয়লাব হয়ে যাওয়ায় এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অতীতের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছি—যেখানেই মাদকের সন্ধান পাবো, আমাদের টিম সেখানেই চলে যাবে।”