দোহাজারী ওসি হাইওয়ে যোগদানের পর থেকে সিএনজি অটোরিকশাগুলো দাপটের সঙ্গে চলছে

কামরুল ইসলাম:

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার অন্যতম ব্যস্ততম রুট গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট থেকে শুরু করে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে দিন-রাতের যানজট এখন এলাকাবাসীর নিত্যদিনের দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই যানজটের মূল কারণ হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি, দায়িত্বে গাফিলতি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত দালাল সিন্ডিকেটের দাপট।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে নষ্ট হচ্ছে সময়

স্থানীয় সিএনজি ও বড় গাড়ির চালকরা জানান, এই রুটে দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটে আটকে থেকে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী যাত্রী ও জরুরি সেবা পেতে চাওয়া সাধারণ মানুষ মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের ওসি মাহাবুব এবং কেরানীহাটের ট্রাফিক পুলিশ ইনচার্জ (টিআই)–এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন চালক, যাত্রী এবং সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে চাঁদাবাজিতেই বেশি ব্যস্ত ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা।

চাঁদাবাজির ‘টোকেন সিস্টেম’—পথে বিপন্ন ন্যায্য চালকরা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগে ট্রাফিক পুলিশের ‘টোকেন’ পেতে প্রতিটি গাড়িকে ১,০০০ টাকা দিতে হতো। এখন সেই অঙ্ক বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে ১,৫০০ টাকা। এই টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে একটি দালাল সিন্ডিকেট, যারা বিভিন্ন সিএনজি ও টমটম সমিতির নেতাদের মাধ্যমে চাঁদা তুলে দিচ্ছে পুলিশের হাতে। কেউ চাঁদা না দিলে কিংবা ‘টোকেন সিস্টেম’-এর বাইরে থাকলে, তাকে হয়রানি, মামলা ও ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।

একজন সিএনজি চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার গাড়ির সব কাগজপত্র ঠিক আছে, লাইট ক্যাটাগরির বৈধ লাইসেন্স আছে। তারপরও শুধু টোকেন না থাকায় আমাকে সিএনজিসহ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখে।”

জুলাই অভ্যুত্থানের পরও বদলায়নি ‘চাঁদাবাজ পুলিশি সংস্কৃতি’

স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে প্রশাসনের কিছু জায়গায় শুদ্ধি অভিযান শুরু হলেও দোহাজারী হাইওয়ে ও কেরানীহাটের ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি আরও সুসংগঠিত হয়ে উঠেছে। এখন তারা ভিন্ন কৌশলে দালাল চক্রের মাধ্যমে রাত-দিন চাঁদা তুলছে, যাতে সাধারণ মানুষ সরাসরি কিছু বুঝতেই না পারে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তার উদ্ভট ব্যাখ্যা

এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের বক্সে কথা বলেন প্রতিবেদক। এক পর্যায়ে ট্রাফিক টিআই বলেন, “প্রতিদিন তো সাংবাদিক আর বিভিন্ন সংগঠনের লোকজনকে মানসিক শান্তির জন্য কিছু দিতে হয়, আমি কি টাকা বাড়ি থেকে এনে দেব?”

প্রতিনিধির প্রশ্ন ছিল—আপনি নিজে কি কখনো কোনো সাংবাদিককে টাকা দিয়েছেন? উত্তরে টিআই বললেন, “আপনি না এলেও আপনার সাংবাদিক ভাইয়েরা তো আসেন।” প্রতিবেদক পাল্টা প্রশ্ন করলে, “আপনি তাহলে কেন দেন?” উত্তরে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ট্রাফিক কর্মকর্তা।

জনগণের প্রশ্ন: কে রুখবে এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট?

বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, সড়কে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনীর একটি অংশই এখন দালাল চক্রের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। যানজটের ভোগান্তি আর চাঁদাবাজির জালে আটকে পড়ে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।

জনগণের প্রশ্ন—প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদার এই ‘অপারেশন’ চলতে পারছে কোন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়? এবং প্রশাসন কেন নিরব?

স্থানীয়রা দুর্নীতির বিরুদ্ধে র‌্যাব, দুদক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জনস্বার্থে এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ ছাড়া বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *