পূর্বধলায় স্বর্ণ ও টাকা নিয়ে জামাইয়ের পলায়ন, স্ত্রীর অভিযোগে তোলপাড়

মোশারফ হোসেন জসিম পাঠান: 

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় স্ত্রীকে মারধর ও শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ নিয়ে জামাই পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে আলোড়ন উঠেছে এবং ভুক্তভোগী স্ত্রী ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের দারে দারে ঘুরছেন।

ঘটনার বিস্তারিত সূত্রে জানা গেছে, পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বিলজোড়া গ্রামের মৃত মিসির আলীর মেয়ে মোছাঃ তামান্না আক্তারকে প্রলোভনের মাধ্যমে বিয়ে করেন একই উপজেলার বিশামপুর গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে মোঃ হুমায়ুন মিয়া। বিয়ের পর প্রায় দেড় বছর তারা ঢাকায় বসবাস করে এবং সংসার জীবন স্বাভাবিকই চলছিল।

তবে হঠাৎ একদিন তামান্না জানতে পারেন, তার স্বামী হুমায়ুন মিয়া পূর্বে গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। এই তথ্য জানার পর ২০২৫ সালের ১৯ জুন তামান্না ঢাকায় নিজের চাকরি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে আসেন এবং স্বামীর অতীত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হুমায়ুন ও তার পরিবারের সদস্যরা তামান্নাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় তামান্না বাবার বাড়িতে ফিরে যান এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

এর কয়েকদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য হুমায়ুন নিজেই স্ত্রী তামান্নার কাছে ফিরে আসেন এবং কয়েকদিন একসঙ্গে থাকেন। কিন্তু এরপরই একদিন খালি ঘর থেকে স্ত্রীর জমানো স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ নিয়ে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান হুমায়ুন।

এ ঘটনায় তামান্না পূর্বধলা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। থানার এসআই অভিযোগের ভিত্তিতে হুমায়ুনের বাড়িতে তদন্তে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান এবং উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে এনে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুলিশের অনুরোধে তামান্না পুনরায় স্বামীর বাড়িতে ফিরে যান।

কিন্তু পুনরায় শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরও শান্তি ফিরে আসেনি। বরং সেখানে গিয়ে রাতেই শুরু হয় তীব্র বাকবিতণ্ডা ও হুমকি-ধমকি। তামান্নার অভিযোগ, তার শ্বশুর ও শাশুড়ি তাকে একটি রুমে একা রেখে বলেন, “আমার ছেলের সাথে না থাকলে তোকে মেরে ফেলব।” ভয়ে কাঁদতে থাকেন তামান্না। তিনি আরও জানান, শাশুড়ি তাকে সেই রুমে রেখে বাইরে চলে গেলে শ্বশুর আবুল হাশেম ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন।

ভোররাতে প্রাণ বাঁচানোর জন্য রুম থেকে পালিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তামান্না। বর্তমানে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এই ঘটনায় পুরো এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তামান্না সাংবাদিকদের কাছে চিৎকার করে বলেন,
“আমি ন্যায়বিচার চাই। আমার স্বর্ণালঙ্কার ও টাকাপয়সা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কাছে সাহায্য চাই। আমার নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।”

স্থানীয়রা বলছেন, একটি অসহায় নারীর প্রতি এ ধরনের অমানবিক আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *