কামরুল ইসলাম:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঘিরে বিরূপ মন্তব্য করায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি পথসভা বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পণ্ড হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটে শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌর শহরের জনতা টাওয়ারের সামনে।
জানা যায়, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে জুলাই পদযাত্রার এক সমাবেশে বলেন, “প্রিয় কক্সবাজারবাসী, আগে আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি, কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে। মানুষের জায়গা-জমি দখল করছে। চাঁদাবাজি করছে।” তিনি আরও বলেন, “সংস্কার কোনো দলের পক্ষে-বিপক্ষে নয়, এটা রাষ্ট্রের পক্ষে।” পাশাপাশি বলেন, “আবার নাকি সে সংস্কার বুঝে না। নাম বললাম না। কক্সবাজারের জনতা এ ধরনের সংস্কারবিরোধী, যে পিআর বুঝে না, রাজপথে তাদেরকে ঠেকিয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ।”
নাসীরুদ্দীনের এসব মন্তব্যের পর কক্সবাজার জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা তীব্র প্রতিবাদ জানান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চকরিয়া উপজেলায়।
বিকেলে জনতা শপিং সেন্টারের সামনে একটি ট্রাকে মঞ্চ তৈরি করেছিল এনসিপি। বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চটি ভেঙে ফেলেন। এনসিপির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং ট্রাকের কাচ ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে বিএনপির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকেল ৫টার দিকে সেখানে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।”
এদিকে, কক্সবাজার শহরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এনসিপির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং পোস্টারে আগুন দেন। এরপর তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী এক বিবৃতিতে বলেন, “নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অবিলম্বে সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে করা অপমানজনক মন্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা না চাইলে বিএনপির কর্মীরা সারা জেলায় কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।”
চকরিয়ার বিক্ষোভের পরপরই কক্সবাজার শহর এবং আশপাশের উপজেলাগুলোতে বিক্ষোভের ডাক দেয় বিএনপি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন শাহীন।
সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করা এনসিপির কৌশলগত ভুল। কারণ এসব বক্তব্য বিএনপি কর্মীদের মানসিকভাবে আহত করে, যার ফলে রাজপথে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতির জটিল বাস্তবতায় এসব বিবৃতি ও প্রতিক্রিয়ার আরও গভীর প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।