পটুয়াখালী আঞ্চলিক হাঁস খামারের ডাঃ আতিকুরের কেরামতি, পিপিআর ২০০৮ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দরপত্র অনুমোদন

মোঃ ইসলাম উদ্দিন তালুকদার: 


দুর্নীতি ও অনিয়মের আতুরঘরে পরিণত হয়েছে পটুয়াখালী আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি। আঞ্চলিক সহকারী উপপরিচালক ডা. আতিকুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হাঁসের খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ঠিকাদারের।

গত ২১-০৭-২০২৫ ইং তারিখে ঢাকা ও বরিশাল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় “পটুয়াখালী আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে হাঁসের খাদ্য সরবরাহের দরপত্রে অংশগ্রহণে বাধা ও সর্বনিম্ন দরদাতাকে হটিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ বিষয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধানে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত ৭-০৭-২০২৫ ইং তারিখে ছিল উক্ত প্রতিষ্ঠানে হাঁসের খাদ্য সরবরাহ দরপত্র আহ্বান ও নমুনা/স্যাম্পল জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এ দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একটি হলো পটুয়াখালীর স্থানীয় ঠিকাদার মোঃ কাউছার হোসেন আকাশের মালিকানাধীন মেসার্স কাশফুল এন্টারপ্রাইজ এবং অন্যটি হলো ঢাকা সাভারের মোঃ বাবুলের মেসার্স মাহিয়ান বিল্ডার্স।

বিষয়টি আগে থেকেই অবগত ছিলেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. আতিকুর রহমান। তিনিও পটুয়াখালীর সন্তান, তার গ্রামের বাড়ি বাউফল উপজেলায়। ফলে দুজনই স্থানীয় হওয়ার সুবাদে ঠিকাদার কাউছারের সাথে একটি গোপন আঁতাত করে মাহিয়ান বিল্ডার্সকে এই কাজ থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করেন।

পরিকল্পনা মোতাবেক মাহিয়ান বিল্ডার্সের পশুখাদ্যের স্যাম্পল/নমুনা জমা দিতে বাধা দিয়ে দরপত্রের শর্ত মোতাবেক অযোগ্য ঘোষণা করে এককভাবে কাশফুল এন্টারপ্রাইজকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই লক্ষ্যে গত ৭-০৭-২০২৫ ইং তারিখে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সামনে ঠিকাদার কাউছার হোসেন আকাশের লোকজন মাহিয়ান বিল্ডার্সের প্রতিনিধি মোঃ আব্দুস সালামকে আটকে রেখে স্যাম্পল/নমুনা ছিনিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে সালাম বাদী হয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় একটি জিডি করেন।

এদিকে পিপিআর ২০০৮ আইন অনুযায়ী, দরপত্র সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ উঠলে তার নিষ্পত্তি না হলে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। অথচ এই দরপত্রের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক আগেই, গত ২০-০৭-২০২৫ ইং তারিখে ঢাকা থেকে কাজটি পাশ করানো হয়, যা একেবারেই অস্বাভাবিক।

এ বিষয়ে পরিচালক (উৎপাদন) ড. খালেদুজ্জামানের সাথে গত ২১-০৭-২০২৫ ইং তারিখে কথা বললে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমার নিকট কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। আমি এখনই কাজটির ব্যাপারে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।”

অন্যদিকে পটুয়াখালী আঞ্চলিক সিনিয়র সহকারী পরিচালক ডা. আতিকুর রহমানের নিকট ২২-০৭-২০২৫ ইং তারিখে পরিচালক (উৎপাদন)-কে বিষয়টি জানিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোঃ আবু সুফিয়ানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।”

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে শর্ষের মধ্যেই ভূত! ফলে ৭ তারিখের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানো ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ডা. আতিকুর রহমান।
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *