রাজশাহীতে প্লট ব্যবসায়ীর বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান: মাদক না পেয়ে ক্ষমা চাইল ডিএনসি

মোঃ আনজার শাহ:


রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ১ নম্বর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে এক প্লট ব্যবসায়ীর বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাসিক মাসোহারা আদায়ে নাহিদ নামে এক দালালের কথায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের নামে পুরো পরিবারকে রাতভর হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, অভিযানে শিশুসহ নারী ও বৃদ্ধদের মারধর করা হয়েছে। অভিযানের সময় কোনো স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বা গ্রাম পুলিশ উপস্থিত ছিলেন না—যা নিয়ে এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ডিএনসি’র রাজশাহী জেলা শাখা প্লট ব্যবসায়ী পিয়ারুলের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পরিবারের নারী ও শিশুদের অবরুদ্ধ করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।

পিয়ারুলের স্ত্রী গোলাপি বেগম (৩৫) বলেন, “তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে আমাকে মারতে মারতে জিজ্ঞেস করছিলো স্বামী কোথায়। আমি বললাম, তিনি চর এলাকায় জমি চাষ করতে গেছেন, তবু থামেনি।”
তিনি আরও জানান, তাদের কিশোরী মেয়ে রুপালি খাতুন (১৩)-কেও মারধর করা হয়। কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়লেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।

প্রতিবেশী বৃদ্ধ পাতানকেও ঘর থেকে ধরে এনে চড়-থাপ্পড় মারা হয়, কারণ তিনি পিয়ারুলের অবস্থান জানাতে পারেননি। এলাকার যুবক মোজাহার পিয়ারুলের ফোন নম্বর দিতে না পারায় তাকেও মারধর করা হয়।

রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও কোনো মাদকদ্রব্য না পেয়ে ডিএনসি কর্মকর্তারা বলেন, “আমরা ভুল করেছি, কিছু মনে কোরো না।”
পরে ভয়ে পিয়ারুলের মেয়ে রুপালি খাতুন তাদের চা খাওয়ান। দুই দফা চা, বিস্কুট ও মুড়ি খাওয়ানোর পরও অভিযানের দল বিরিয়ানি খেতে চায়, কিন্তু ঘরে তা না থাকায় সম্ভব হয়নি।

গোলাপি বেগম বলেন, “আমার স্বামী যদি দোষী হয়, বিচার আছে। কিন্তু এভাবে রাতের অন্ধকারে এসে আমাদের মারধর করার অধিকার তাদের নেই। তাদের আচরণ ছিল ডাকাতের মতো। আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযানে জড়িতদের শাস্তি চাই।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কেল্লাবারুইপাড়া এলাকার এলতাস মেম্বারের ছেলে দালাল নাহিদ প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বলেন, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যেই এমন অভিযান চালানো হয়েছে।

অভিযানে থাকা ডিএনসি’র বিপ্লব, রিপন ও হাফিজা খাতুনের নাম জানান স্থানীয়রা। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন পরিদর্শক রায়হান।

তিনি বলেন, “নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়, তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে দালাল নাহিদ বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, “আমি কিছু জানি না, পরে খোঁজ নিয়ে জানাবো। তবে অভিযানের সময় বিনাদোষে কাউকে মারধর করার এখতিয়ার আমাদের নেই। যদি হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *