কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ট্রলিং বোটের মাধ্যমে মাছ শিকার। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কুয়াকাটা, আলীপুর ও মহিপুর উপকূলের হাজার হাজার সাধারণ জেলে। মাছ সংকট দেখা দিয়েছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি মার্কেটেও, যেখান থেকে দেশের মৎস্যখাতের একটি বড় অংশের আয় আসে।
রবিবার সকাল ১১টায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটা চৌরাস্তায় ট্রলিং ফিশিং বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকরা।
মানববন্ধনে জেলেদের অভিযোগ:
বক্তারা বলেন, মৎস্য প্রজননের মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও গভীর সমুদ্রে দিন-রাত চলছে অবৈধ ট্রলার দিয়ে মাছ শিকার। ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ক্ষুদ্র জেলে পরিবারগুলোকে।
তাদের ভাষায়, বড় বড় ট্রলারগুলো আইন অমান্য করে যেভাবে মাছ ধরছে, তাতে ছোট ট্রলার এবং সাধারণ জেলেদের জীবিকা চরম হুমকির মুখে। এ অবস্থায় তারা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ ও নিয়মিত নজরদারি দাবি করেন।
স্থানীয় জেলে আল-আমীন জানান, আলীপুর-মহিপুর মৎস্য বন্দরে বহিরাগত ও প্রভাবশালী ট্রলিং ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি। অথচ এই অঞ্চলে লম্বাজাল, খুঁটাজাল ও ছান্দিজাল ব্যবহারকারী কয়েক হাজার বৈধ মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। এগুলোতে কর্মরত হাজার হাজার জেলে পরিবারের একমাত্র জীবিকা হচ্ছে সাগরে মাছ শিকার। কিন্তু ট্রলিং বোট দিয়ে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণে সব ধরনের মাছের পোনা ধ্বংস হচ্ছে, ফলে বৈধ জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, হয়ে পড়ছেন দিশেহারা।
তিনি আরও জানান, অনেকে এখন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একদিকে জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, অন্যদিকে রূপালী ইলিশ হারিয়ে যাওয়ায় সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
সরেজমিন চিত্র:
আলীপুর-মহিপুর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্র থেকে ফিরে আসা বহু নিষিদ্ধ ট্রলিং বোট শিববাড়িয়া নদীর বিভিন্ন ঘাটে নোঙর করে রয়েছে। প্রতিটি বোটেই রয়েছে নিষিদ্ধ জালে ভরা মাছ। এগুলো দিয়েই গভীর সমুদ্রে অবাধে মাছ ধরা হচ্ছে।
প্রশাসনের অবস্থান:
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, “নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় বেশ কয়েকটি ট্রলিং বোট মালিককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি বোট জব্দ করে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে তারা হাইকোর্টে মাছ ধরার অনুমতি চেয়ে একটি রিট করেছে। আমরা আশা করছি, রিট নিষ্পত্তি হলেই প্রশাসনিকভাবে ট্রলিং বন্ধে অভিযান শুরু করা যাবে।”