এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নামে ভুয়া ভিডিও প্রচার: বাংলাফ্যাক্ট

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিওকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য হিসেবে প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর অধীনস্থ ফ্যাক্টচেক ও মিডিয়া গবেষণা ইউনিট ‘বাংলাফ্যাক্ট’।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) প্রকাশিত ‘বাংলাফ্যাক্ট’-এর অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীর গুলশানে সংঘটিত চাঁদাবাজির এক ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বক্তব্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি যাচাই করে দেখা গেছে, তা সম্পূর্ণ এআই প্রযুক্তিনির্ভরভাবে তৈরি এবং বিভ্রান্তিকর।

এআই ভিডিও: গুজব সৃষ্টির আধুনিক কৌশল

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ভিডিওতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কণ্ঠ, মুখভঙ্গি ও বক্তব্য—সবই কৃত্রিমভাবে তৈরি। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, “চাঁদাবাজ হোক বা যাই হোক, ওরা তো আমাদেরই সন্তান। হ্যাঁ, গুলশানে যে ধরা পড়েছে সে আমাদের এনসিপির নেতা। আমি বকে দিয়েছি, বলেছে আর করবে না।”

তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই বক্তব্যের কোনো সত্যতা নেই। ভিডিওতে ডানপাশের নিচে ‘vyo’ লেখা রয়েছে, যা গুগলের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভিডিও জেনারেটর টুলের ইঙ্গিত। এ ধরনের টুল দিয়ে শুধুমাত্র টেক্সট ইনপুট দিয়েই কণ্ঠস্বর ও মুখভঙ্গিসহ ভিডিও তৈরি করা সম্ভব।

বাংলাফ্যাক্ট আরও জানায়, ভিডিওটির ইংরেজি সাবটাইটেলে একাধিক বানান ও ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে, যা পেশাদার কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার বক্তব্যে থাকার প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়া, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকেও এমন কোনো মন্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গুলশান চাঁদাবাজি ইস্যুর প্রেক্ষাপট

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় ঢুকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা নিজেদের গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য বলে দাবি করেছিল। পরবর্তীতে দুটি সংগঠনই অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয়।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর লক্ষ্যে একটি মহল এই ভুয়া ভিডিও ছড়াতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

গুজব প্রতিরোধে বাংলাফ্যাক্টের ভূমিকা

বাংলাফ্যাক্ট জানিয়েছে, বাংলাদেশে চলমান গুজব, অপপ্রচার, ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অনুসন্ধান ও ফ্যাক্টচেক করে আসছে তারা। তথ্যসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সকল শ্রেণির নাগরিককে যাচাই-বাছাই করে তথ্য গ্রহণের আহ্বান জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *