ঘরবাড়ি ভেঙে জনগণের মুখে অন্ধকার, দুর্গাপুরে উন্নয়ন না ধ্বংস?

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:


নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গন্ডাবেড় গ্রামে সরকারের নামে একটি কথিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও গাছপালা নিধনের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী আবুল কাসেম ঢালী অভিযোগ করেন, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির স্ত্রী রানু আক্তারের নেতৃত্বে একটি রাস্তা নির্মাণের নামে তাঁর বসতঘর এবং আশপাশের ফলদ ও বনজ গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, “আমার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি তছনছ করে দিয়েছে ওরা। ঘরের চালা ভেঙে ফেলেছে, বেড়া উচ্ছেদ করেছে। কোনও সরকারি নোটিশ পাইনি, কোনও অনুমতি নেয়নি। রাস্তা তো দোহাই, আসলে এটা একরকম প্রতিশোধ। এটা প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।”

স্থানীয় সুধীমহল বলছেন, এটি শুধুই পূর্বশত্রুতার বহিঃপ্রকাশ। রানু আক্তার একটি ভুয়া উন্নয়ন কাজের নাটক সাজিয়ে সরকারি প্রকল্পের ছত্রছায়ায় ব্যক্তি আক্রোশ মেটাতে ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছেন। এলাকাবাসীর ভাষায়, “এই প্রকল্পে না আছে কোনো প্রকৌশলীর অনুমোদন, না আছে সরকারি পর্যবেক্ষণ। তাহলে এটি কার অনুমতিতে হলো? কে দিল এই বর্বর কাজের ছাড়পত্র?”

প্রতিশোধ না উন্নয়ন? প্রশাসনের জবাব কোথায়?

সরকার যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়, তা জনসেবার উদ্দেশ্যে এবং জনকল্যাণের জন্য। কিন্তু তা যদি ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতিয়ারে পরিণত হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় নীতি ও সংবিধানের মৌলিক চেতনার অপমান ঘটে। গন্ডাবেড় গ্রামের এই ঘটনা সেই অপমানের নগ্ন উদাহরণ। মানুষ এখন প্রশ্ন করছে, “উন্নয়ন প্রকল্প কি এখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অস্ত্রে পরিণত হয়েছে?”

আইনের চোখে অপরাধের গুরুত্ব

বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কারও ঘরবাড়ি ভাঙা, গাছ কেটে নেওয়া কিংবা জমির ওপর কোনো স্থাপনা নির্মাণ – যদি ক্ষতিপূরণ ছাড়া, কোনো নোটিশ ছাড়াই জোরপূর্বক করা হয় – সেটি স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধ।

দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারায় বলা হয়েছে, অপরের মালামাল বা সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করলে দুই বছরের জেল অথবা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ভূমি আইন অনুসারে, সরকারের কোনো অনুমোদন ছাড়া জমি অধিগ্রহণ বা ব্যবহার বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ অনুসারে, সরকারি ক্ষমতা বা পদ ব্যবহার করে নিজ বা অন্যের স্বার্থে অবৈধ কাজ করলে, সেটি দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে এবং এতে জেল-জরিমানা হতে পারে।

বিচারের দাবিতে উত্তাল জনতা

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু এমন উন্নয়ন নয় যা আমাদের ঘর ভেঙে, গাছ কেটে, স্বপ্ন পুড়িয়ে দেয়। এটি প্রতিহিংসার রাজনীতি, উন্নয়ন নয়।” তাঁরা দাবি করছেন, অবিলম্বে এই ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। নাহলে জনরোষ ঠেকানো কঠিন হয়ে উঠবে। দুদক ও জেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চায় এলাকাবাসী।

সচেতন মহল বলছে, এই ঘটনায় প্রশাসন নীরব থাকলে তা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ উদাহরণ হয়ে থাকবে। তাই জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কঠোর নজরদারি ও হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

যোগাযোগে ব্যর্থ, নীরব অভিযুক্ত ইউপি সদস্য

এই ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রানু আক্তারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাঁর পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেও বার্তা পাঠানো হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই নীরবতাই কি তার অপরাধের ইঙ্গিত? এমন প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে গন্ডাবেড়ের জনমনে। যদি এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না হয়, তাহলে এটি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থার চরম পতন ঘটাবে।

উন্নয়নের নামে প্রতিশোধ, রাজনৈতিক দম্ভ এবং প্রশাসনিক নীরবতা মিলে যে দুর্বৃত্তায়ন সৃষ্টি হচ্ছে—তাকে এখনই প্রতিহত করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *