সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা সজিব ও সহকর্মী মাহমুদুর

মো. সাইফুল ইসলাম সজিব: 

সোমবার সকাল ১১টার দিকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মোল্লারহাট সড়কের চান্দেরহাট এলাকায় ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা।

সজিব ছিলেন বরগুনার বামনা উপজেলার পূর্ব সফিপুর গ্রামের সন্তান। তাঁর বাবা মো. দুলাল সিকদার। জীবনের প্রয়োজনে তিনি বরিশালের বিএম কলেজ ব্রাঞ্চে মিঠাই প্যাস্ট্রি শপে কর্মরত ছিলেন। কর্মস্থলের দায়িত্বেই খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি, সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী মাহমুদুর রহমান। কিন্তু পথে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি, আর সেই বৃষ্টিজলভেজা সড়কই যেন কেড়ে নেয় তাঁর ভবিষ্যৎ। সজিবের যশোরের বন্ধু অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় এক পথচারী রাজিব বৌদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান এবং পরে একটি অটোভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক সজিব ও পথচারী রাজিবকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই মৃত্যুতে স্তব্ধ বরগুনা। কারণ, সজিব ছিলেন শুধু একজন কর্মজীবী তরুণই নয়, ছিলেন একজন আন্দোলনকর্মী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বামনা উপজেলার সংগঠক সৈয়দ নাহিন আহসান রাহবার জানিয়েছেন, বরিশালের ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে দুই পায়ে গুরুতর আহত হন সজিব। তাঁর নাম রয়েছে সরকার ঘোষিত গেজেটভুক্ত আহত যোদ্ধাদের তালিকায়, যার মেডিকেল কেস আইডি ২০৮৪৭। সেই সময়েও সজিব হার মানেননি। এলাকায় ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে সকলের ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন তিনি। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন প্রতিনিয়ত।

বাগেরহাটের মোল্লারহাট হাইওয়ে পুলিশের ওসি নুরুজ্জামান চানু জানান, দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলচালক সজিব ও পথচারী রাজিব নিহত হন। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। নিহতদের মরদেহ ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আইনগত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

আরও হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলো—মৃত্যুর মাত্র ছয় দিন আগে সজিব নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, “মৃত্যু শীতল! এই তো আর কিছু সময়।” তখন কে জানত, এই লেখাই পরিণত হবে তাঁর জীবনের শেষ বার্তায়! কী অদ্ভুত সমাপতন—একজন জীবন্ত প্রতিবাদীর এমন হঠাৎ বিদায় যেন কেবল কষ্ট নয়, এক গভীর শূন্যতা হয়ে রয়ে গেল।

সজিব সিকদারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু ও আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের মাঝে। হারিয়ে গেল এক সংগ্রামী প্রাণ, যিনি জীবনের প্রতিটি ধাপে লড়েছেন নিজের অবস্থান থেকে।

সেই লড়াইয়ের শেষ দৃশ্যটি বড্ড করুণ, বড্ড একা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *