আলমাস হোসাইন:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)–এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “জুলাই-আগস্টে সরকারি চাকরির আশায় মানুষ রাজপথে নামেনি। তারা গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের আশায় জীবন দিয়েছিল। কয়েকজন মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে নয়, বরং জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই তাদের আন্দোলন।”
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার আশুলিয়ায় আয়োজিত “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পরিবারের সম্মানে” আয়োজিত মহাসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “সরকারের কর্মপরিকল্পনায় শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ কোথায়? রাষ্ট্রের মালিক জনগণ—তাদের মতামত উপেক্ষা করে সরকার চলতে পারে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জনগণের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। কারণ, জনগণকে দুর্বল রেখে কোনো পরিকল্পনাই টেকসই হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের ভুল সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহীদ শ্রমজীবী জনগণের সম্মানে বিশেষ স্মারক স্থাপনা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তারেক রহমান। এ সময় তিনি শহীদ পরিবারগুলোকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনার পতিত সরকার নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে। তারা এখনও ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। আজও দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব তমিজ উদ্দিন, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, জেলা বিএনপির সহসভাপতি খন্দকার শাহ মইনুল হোসেন মিন্টু, সাবেক সহসভাপতি কফিল উদ্দিন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন সরকার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল আলম রাশেদসহ ঢাকা জেলা বিএনপি, সাভার, আশুলিয়া থানা বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই শহীদদের’ আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ৩০টি পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা স্বরূপ ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। এছাড়া ৩০ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে আশুলিয়া থানার সামনে শহীদদের লাশ পোড়ানোর দৃশ্য, এপিসি থেকে শহীদ ইয়ামীনকে ফেলে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, “ছাত্র ও জনগণের প্রতিপক্ষ ছিল এক ফ্যাসিস্ট সরকার। আমরা চাই সেই সরকারের দোসরদের সর্বোচ্চ শাস্তি—যা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।”
অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উপস্থিত ছিলেন ১১৫ জন পুলিশ সদস্য, ২৩ জন ডিবি সদস্য ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।