এনসিপির মাসব্যাপী পথসভা শেষ, ৩ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ গঠনের কর্মসূচি ঘোষণা

আলমাস হোসাইন:


ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় পথসভার মধ্য দিয়ে শেষ হলো জাতীয় নাগরিক পার্টির দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি। সমাবেশে এনসিপির নেতারা আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে সকলকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। সেদিন নতুন বাংলাদেশ গঠনের কর্মসূচি ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

বুধবার (৩০ জুলাই) রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইলে উপস্থিত হন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন, তাসনিম জারা ও নাহিদ ইসলাম। তবে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।

পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্মসূচি শেষ করে বাইপাইল ত্যাগ করেন নেতাকর্মীরা। এদিকে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার স্বার্থে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। আয়োজনে অন্যদের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াতে দেখা যায় নাহিদ ইসলামকে।

সমাপনী বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই সাভার, এই আশুলিয়া, এই বাইপাইলের পয়েন্টে গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমাদের ছাত্র-জনতা বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে। সাভার-আশুলিয়া গণ-অভ্যুত্থানের সময় হটস্পট ছিল আন্দোলনে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, এদিকে সাভার-আশুলিয়া ওদিকে গাজীপুর-টঙ্গী, আপনারা প্রতিরোধ তৈরি করেছিলেন বলেই ঢাকা সুরক্ষিত ছিল। ঢাকার মানুষ রাজপথে নামতে সাহস করেছিল।

ছবি: স্বাধীন সংবাদ

তিনি বলেন, এই সাভার-আশুলিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমরা জানি, কী নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছিল, গুলি চালানো হয়েছিল, আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল। এখানে বক্তব্য রেখেছেন শহীদ সজলের মা, যাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল নির্মমভাবে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা সারা বাংলাদেশে আমাদের ভাইদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। সেই শেখ হাসিনাকে দশবার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ আসলে কমবে না। বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিন ক্ষমা করবে না শেখ হাসিনাকে। কোনো দিন ক্ষমা করবে না আওয়ামী লীগকে। কোনো দিন ক্ষমা করবে না কোনো ধরনের ‘রিফাইন আওয়ামী লীগ’কে।

তিনি বলেন, ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলা থেকে আগামীতে নেতৃত্ব তৈরি হবে। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলাগুলো বৈষম্য এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছে। আমরা মনে করি এই পাঁচটি উপজেলায় অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব। শ্রমিক অঞ্চল রয়েছে এই সাভারেও। কিন্তু নানা কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন গড়ে তোলে, কারণ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। এই শ্রমিকরাই আমাদের গণ-অভ্যুত্থানে শক্তি জুগিয়েছিল। রাজপথে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। আমরা সেই শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির জন্য লড়াই করতে চাই। আমরা সাভার-আশুলিয়াসহ পুরো ঢাকা জেলাকে চাঁদামুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সন্ত্রাসমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে ৩০ দিন ধরে জুলাই মাসজুড়ে পদযাত্রা করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের পদযাত্রায় যে জনস্রোত নেমে এসেছে, সে জনস্রোতে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে, হামলা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা থেমে যাইনি, এই জনস্রোত থামানো যায়নি, পদযাত্রা থামানো যায়নি। ইনশাআল্লাহ্ আগামীর বাংলাদেশে, আগামীর ঢাকায় এনসিপির দিকে এই জনস্রোত থামানো যাবে না।

এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির ঢাকা জেলার নেতা মেহরাব সিফাতের সভাপতিত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাছির উদ্দিন পাটোয়ারি, ডা. তাসনীম জারা, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

এর আগে, সন্ধ্যা ৬টায় পথসভা শুরুর কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থলে আসেন রাত ৯টার দিকে। সন্ধ্যা থেকেই নেতাকর্মীরা সভাস্থলে যোগ দিতে থাকেন। সভা শুরুর পর অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন। এ সময় সভাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য, এপিবিএন ও র‍্যাব সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।

১ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী পদযাত্রা শুরু করেছিল এনসিপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *