নাহিদের ফেসবুক পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় যে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন সাদিক কায়েম

স্বাধীন সংবাদ ডেস্ক:  

‘জুলাই বিপ্লব’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া নাহিদ ইসলামের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ফের আলোচনায় এসেছে ২০২৫ সালের সেই ঐতিহাসিক ছাত্রআন্দোলন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে দাবি করেন, মো. আবু সাদিক কায়েম কখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন না, বরং ৫ আগস্টের পর ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় ব্যবহার করেছেন।

এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আন্দোলনের আরেক প্রভাবশালী মুখ, ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক এবং ‘জুলাই বিপ্লব’ এর সক্রিয় সংগঠক মো. আবু সাদিক কায়েম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি নাহিদের বক্তব্যকে ‘ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমার ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং তা সৎ ইতিহাস রচনার পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।”

সাদিক বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, দমন-পীড়নের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছি। ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত মূল সমন্বয়করা অনুপস্থিত থাকাকালীন সময়েই আমি ও আমার সহযোদ্ধারা নয় দফা কর্মসূচি প্রণয়ন, মিডিয়া ব্রিফিং, দেশের বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ, আন্দোলনের আকার টিকিয়ে রাখা থেকে শুরু করে শহীদদের নিরাপত্তা পর্যন্ত বহুবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে যে আমি কোথাও গিয়ে সমন্বয়কের পরিচয়ে কোনো কিছু দখল বা আত্মসাৎ করেছি, তাহলে একটি সিঙ্গেল ডকুমেন্ট দেখাক। আমি ৫ আগস্টের পর যতগুলো বক্তব্য দিয়েছি, সবখানেই বলেছি—জুলাই বিপ্লবের নায়করা হলেন আমাদের শহীদ ও আহত সহযোদ্ধারা। তারা নিজেরা জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের পথ তৈরি করেছেন।”

আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততা ও বহুধা অংশগ্রহণের দিক তুলে ধরে সাদিক বলেন, “এটা কোনো একক সংগঠনের ছিল না। এখানে সব মতের মানুষ অংশ নিয়েছেন। একদল এখন নিজেদের একক দাবিদার সাজাতে গিয়ে অন্যদের অবদানকে অস্বীকার করছে, যা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

তিনি বলেন, “আমাদের মূল সমন্বয়কদের কেউ কেউ তখন আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন, কেউ আবার ‘গুমের নাটক’ করে পরবর্তীতে ‘বিপ্লবী’ সাজেন। অথচ আমরাই সেই সময় চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও মিডিয়া ব্যবস্থাপনা চালিয়ে গেছি। ৫ আগস্টের পর যারা দায়সারা প্রেস কনফারেন্স আর ক্ষমতা ভাগাভাগির চর্চায় নেমেছেন, তারা আজ ইতিহাসের শিক্ষক হতে চাচ্ছেন।”

সরকার গঠনের প্রশ্নেও তিনি নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমি নিজে মাহফুজ আলমকে বলেছিলাম, হাসিনা যদি পালায়, তখন সরকারের কাঠামো কেমন হবে—তা আন্দোলনের ময়দান থেকেই নির্ধারিত হবে, কোনো সেনা কার্যালয় বা অন্যখান থেকে নয়।”

সবশেষে সাদিক কায়েম বলেন, “যারা এখন নিজেদের আন্দোলনের মুখ বানাতে চাইছেন, তারা যেন ইতিহাস বিকৃত না করেন। আমরা আশা করি, তারা দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। আর কেউ যদি জুলাই বিপ্লব নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, চেতনার নামে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করে, তবে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।”

এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলছেন, জুলাই আন্দোলন নিয়ে দখলদারিত্বের প্রবণতা ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত করছে। এ বিতর্কের মাধ্যমে আগামী দিনে ‘জুলাই বিপ্লব’ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ গবেষণার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *