বিএনপির প্রধান লক্ষ্য জনগণের মালিকানা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্থির নয়, বরং জনগণের মালিকানা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়াই এখন প্রধান লক্ষ্য। তিনি মনে করেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে “জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি” উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর জোর

ফখরুল বলেন, “আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। দেশের মালিক জনগণ, সেই মালিকানার অধিকার তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে যে অচলাবস্থা চলছে, তা অনেকটাই কেটে যাবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া এই সংকটের সমাধান নেই।”

সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য

বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব জানান, “১২টি মৌলিক বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে একমত হয়েছে। বাকি কিছু বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে। যেসব বিষয়ে পূর্ণ ঐকমত্য হবে না, সেগুলো আপাতত বাদ রেখে মৌলিক বিষয়গুলোকেই সামনে এগিয়ে নেওয়া দরকার।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সংস্কারই ভবিষ্যতের রাজনীতিকে পরিশীলিত করবে এবং সংঘাতের রাজনীতির অবসান ঘটাবে।”

গণতন্ত্রে শিষ্টাচারের আহ্বান

গণতন্ত্রে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকলেও তাতে সীমারেখা থাকা উচিত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্র মানেই কাঁদা ছোড়াছুড়ি নয়। একে অপরকে হেয়প্রতিপন্ন করা বা অসৌজন্যমূলক ভাষা ব্যবহার করে রাজনীতি চালালে তিক্ততা তৈরি হবে। আমাদের উচিত শিষ্টাচার বজায় রেখে মতপার্থক্য প্রকাশ করা।”

শহীদদের স্মরণ ও ঐক্যের ডাক

জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অভ্যুত্থান এবং এই সময়ের শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে তিনি বলেন, “যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। সেই আত্মত্যাগের প্রেরণায় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গঠনের পথে এগিয়ে যেতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আজ যারা শহীদ হয়েছেন, তারা আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের পথিকৃৎ। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি—আসুন, ঐক্যবদ্ধ হই। বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি।”

পটভূমি ও বার্তা

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশে একাধিক গণআন্দোলন, পুলিশের দমন-পীড়ন এবং রাজনৈতিক গ্রেফতার ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। সেই পটভূমিতে একবছর পর বিএনপি এবং অন্য বিরোধী দলগুলো সেই সময়ের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতাকে স্মরণ করে ঐক্যের বার্তা দিচ্ছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের এই আলোচনা সভায় বিএনপি এবং সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *